নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: জাটকা নিধন রোধে ২০ দিন বন্ধ ছিল নদী থেকে ইলিশ আহরন। নির্দিষ্ট সময় পর নৌকা-জাল নিয়ে নদীতে নামেন জেলেরা। তবে, জেলের জালে ইলিশের বদলে ধরা পড়ছে প্রচুর পরিমাণ বড় পাঙাশ মাছ। বড় বড় এসব পাঙ্গাস মাছের ভালো দামও পাচ্ছেন তারা।

রোববার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন মাছের বাজারেও দেখা গেছে এমন বড় বড় পাঙ্গাস মাছ। একেকটির ওজন ৮ থেকে ৯ কেজি পর্যন্ত। বিক্রেতারা ৭ শত থেকে ৮ শত টাকা দাম হাকছেন। ক্রেতারাও অনেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন নদীর পাঙ্গাস মাছ।

জেলেদের জালে বড় বড় নদীর পাঙ্গাস মাছ ধরা পরছে এ বিষয়ে সমকাল একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, গতকাল সকালে পোর্টরোডের মোকামে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, খুচরা বিক্রেতারা বড় বড় পাঙাশ সাজিয়ে হাকডাক দিচ্ছেন বিক্রির জন্য। খুচরা বিক্রেতা ইলিয়াশ হোসেন বলেন, ‘অবরোধ শ্যাষ হওয়ার পর ইলিশের চেয়ে পাঙাশ আইতেছে বেশি, দামও একটু কম’।

পোর্টরোড মোকামের মৎস্য শ্রমিক শফিক বলেন, ইলিশের আড়তদাররা এখন পাঙাশ কেনাবেচা করেন। একাধিক ইলিশ জেলে জানিয়েছেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে তারা নদীতে জাল পেতে ইলিশের চেয়ে পাঙাশ বেশি পাচ্ছেন।

বরিশাল অঞ্চলের মেঘনা ও শাখা নদীতে জেলেদের জালে বড় বড় পাঙাশ মাছ ধরা পড়ছে। বরিশাল নগরীর পোর্টরোডের পাইকারি মৎস্য মোকামের আড়তদাররা বলেছেন, শনিবার থেকে ইলিশের ট্রলারে আসছে নদীর পাঙাশ। দুদিন ধরে পাঙাশ বেশি আসছে মোকামে। ক্রেতারাও ইলিশের বদলে পাঙাশ কিনছেন।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ শিকারে নামছেন জেলেরা

একযুগে ইলিশ বেড়েছে দ্বিগুণ

এক ইলিশের দাম ১০ হাজার

বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হলো ১ লাখ পাঙ্গাস পোনা

জেলেদের বরাত দিয়ে আড়তদাররা বলেন, মেঘনা, আড়িয়াল খাঁ, কালাবদর ও লতা নদীতে এখন ইলিশের বদলে বেশি ধরা পড়ছে পাঙাশ। আর এতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার ক্ষতি পুশিয়ে নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন জেলেরা।

কেন এতো বেশি পাঙাশ ধরা পড়ছে জানতে চাইলে বরিশালের হিজলা উপজেলার মেঘনা তীরবর্তী ধুলখোলার জেলে মোজাম্মেল হোসেন বলেন, নদীতে কুয়াশা বাড়লে জালে বেশি পাঙাশ ধরা পড়ে। ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং আঘাত হানার পর বরিশাল অঞ্চলে শীতের ছোয়া লেগেছে। তাই জালে পাঙাশ ধরা পড়ছে। মকবুল মাঝি নামের অপর এক জেলে বলেন, শনি ও রোববার তিনি পাঙাশ পেয়েছেন ৮ হাজার টাকার। কিন্ত একই সময়ে ইলিশ পেয়েছেন মাত্র ১ হাজার ২২০ টাকার।

রোববার সকালে পোর্টরোডের পরেশ দাসের আড়তে বড় সাইজের ২৮টি পাঙ্গাশ নিয়ে আসেন হিজলা উপজেলার মেঘনা তীরবর্তী চলকিল্লার জেলে শামীম ফকির। তিনি বলেন, ‘জাল পাতছিলাম ইলিশের লইগ্যা, পাইছি ২৮ পিস পাঙাশ। কার্তিক মাসের নিশির (শিশির) খাইতে পাঙ্গাশ মাছ চক (ঝাক) বাইন্দা নদীতে ভাসে’।

পোর্টরোড মৎস্য মোকামের সিকদার ফিসের স্বত্ত্বাধীকারি জহির সিকদার বলেন, কার্তিকের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বরিশাল অঞ্চলের মেঘনা ও শাখা নদীতে জেলেদের জালে প্রচুর পাঙাশ ধরা পড়ে। নিষেধাজ্ঞা শেষে শনিবার থেকে আড়তে ইলিশের চেয়ে পাঙ্গাশ বেশি আসছে। দামও একটু কম। পাঙাসের আমদানি এভাবে অব্যাহত থাকলে দাম আরও কমবে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

বছরে ৫ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন

বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনে শীর্ষে বাংলাদেশ

সরকারের চমৎকার ব্যবস্থাপনায় ইলিশের উৎপাদন এখন বিশ্বের বিস্ময়

জহির সিকদার জানান, রোববার ৮-১০ কেজি ওজনের পাঙ্গাশ পাইকারি ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। খুচরা বিক্রি হয়েছে ৫৫০-৬০০ টাকা কেজি দরে। বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. আনিছুর রহমান তালুকদার বলেন, এখন পাঙাশের মৌসুম। তাছাড়া জেলেরা আগের চেয়ে সচেতন হয়েছেন। এখন আর ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে পাঙাশের বাচ্চা নিধন করেন না। ইলিশ রক্ষার বিধিনিষেধ কার্যকর হওয়ায় পাঙাশের প্রজনন বেড়েছে।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যাললেয়র মৎস্য বিজ্ঞা অনুষদের সাবেক ডীন অধ্যাপক ড. মো. লোকমান আলী বলেন, ইলিশ ব্যবস্থাপনায় সরকারের নানা উদ্যেগের ফলে নদ-নদীতে পাঙাশসহ অন্যান্য মাছের সুরক্ষা এবং প্রজনন বেড়েছে। শীতের শুরুতে পাঙ্গাশ মাছ ধরা পড়ে। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর মেঘনাসহ বিভিন্ন শাখা নদীতে ইলিশের পাশাপাশি প্রচুর পাঙশ ধরা পড়ছে। আরও একমাস নদনদীতে পাঙাশের আধিক্য থাকবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ