পুকুরে নিয়মিত প্রোবায়োটিকস প্রয়োগ

মুহাম্মদ সালাহ উদ্দীন রাশেদ, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: পানির বিভিন্ন গুনাগুণের আদর্শ মাত্রার পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ পুকুর ব্যবস্থাপনার অত্যন্ত জরুরী বিষয়। আসুন জেনে নেয়া যাক পুকুরের মাটি ও পানির বিভিন্ন গুনাগুণ (Parameters) পরিমাপের পদ্ধতি ও গুরুত্ব।

উদাহরণ হিসেবে যদি বলি তাহলে বলা যাবে, দ্রবীভূত অক্সিজেন (DO), pH, মুক্ত অ্যামোনিয়া, নাইট্রাইট, তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, স্বচ্ছতা (Transparency), H2S, হার্ডনেস ইত্যাদির নিয়মিত পর্যবেক্ষণ পুকুরের মাছের জন্য উপযুক্ত বাসস্থান সুনিশ্চিত করে।

এরমধ্যে দ্রবীভূত অক্সিজেনের উপস্থিতি কমে গেলে মাছ পুকুরের উপরের স্তরে উঠে আসে এবং একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে।

চিংড়ি মাছের খোলস পরিবর্তনের সময় প্রচুর অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। এসময় এ্যারেটর চালিয়েও অনেক সময় দ্রবীভূত অক্সিজেনের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।

এসকল ক্ষেত্রে আমরা এ্যারেটরের ব্যবহার বা কৃত্রিমভাবে অক্সিজেনের উপস্থিতি বাড়াতে পিওর-অক্সি, অক্সিরিচ, বায়ো-অক্স অথবা বাজারে প্রচলিত সোডিয়াম পারকার্বোনেট তথা সোডিয়াম পারঅক্সি হাইড্রেট (ট্যাবলেট বা দানাদার) পুকুরে প্রয়োগ করতে পারি।



এছাড়াও পুকুরে ঢেউ তুলে, সাতার কেটে, তাল গাছের ডাল বা বড় বাঁশ দিয়ে পানির উপরিভাগে চাপড় দেয়ার মাধ্যমে পুকুরে দ্রবীভূত অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়াতে পারি।

মৎস্য চাষে pH এর আদর্শ মান ৭.৫-৮.৫। তাই pH এর মান৭.০ এর চেয়ে কমে গেলে পুকুরে চুন বা জিওলাইট প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে pH যদি বেশি কমে যায় সেক্ষেত্রে প্রাকৃতিক পাথুরে চুনের ব্যবহারই সর্বোত্তম।

এছাড়াও pH যদি ৮.৫ বা ৯.০ এর উপরে উঠে যায়, সেক্ষেত্রে আমরা চিটাগুড়, তেঁতুলের দ্রবণ অথবা এসভিট সি (ভিটামিন সি ১০০%) ও বিভিন্ন অর্গানিক এসিড প্রয়োগ করা যেতে পারে। এভাবে আমরা পুকুরের pH এর মান নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।

পুকুরে অ্যামোনিয়ার উপস্থিতি মাছ চাষের অন্যতম প্রধান অন্তরায়। এছাড়াও পুকুরে নাইট্রাইট, H2S, CO2 সহ বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাসের উপস্থিতি হ্রাস করতে বাজারে প্রচলিত পিওর ইউকা বা ইউকা ও প্রোবায়োটিকস সমন্বয়ে বিভিন্ন প্রোডাক্ট বেশ কার্যকর।

বাজারের প্রচলিত গ্যাসোনেক্স ওয়াই+, গ্যাসট্র্যাপ সহ ইউকা ও প্রোবায়োটিকস এর সমন্বয় প্রোডাক্টগুলো ভালো ফলাফল দেয়। পাশাপাশি এক্ষেত্রে “গ্যাসপেল”হতে পারে অত্যন্ত কার্যকরি সমাধান।

কারণ এতে ইউকা এবং প্রোবায়োটিকস এর পাশাপাশি আছে এলোভেরা ও প্রচুর পরিমাণে এনজাইম। যা ক্ষতিকর গ্যাস শোষণের সাথে সাথে পুকুরের তলদেশের সকল ধরনের জৈব বর্জ্যসমূহকে সমূলে অপসারণ করবে।

‘ইউকা সিক্স প্রো’ (লিকুইড) ও এক্ষেত্রে স্বল্প খরচে ভালো সমাধান হতে পারে। আর প্রচলিত হররা টানা বা জাল টানা দিয়েও উপকার পাওয়া যেতে পারে।

পুকুরের মাটি ও পানির বিভিন্ন গুনাগুণ (Parameters) পরিমাপ পদ্ধতি এবং গুরুত্ব লেখাটির লেখক; মুহাম্মদ সালাহ উদ্দীন রাশেদ, এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (অ্যাকুয়া) আলমদিনা ফার্মাসিউটিক্যালস লি.।

আরও পড়ুন: লাভজনক মাছ চাষে দৈনন্দিন রুটিন কাজ ও গুরুত্ব