নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: কোল্ড স্টোরেজে ৫০ কেজি ওজনের বেশি বস্তা রাখা যাবে না বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে, যুগ যুগ ধরে চলে আসা কৃষিপণ্য ব্যবস্থাপনা ভাঙতে নারাজ আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা। তারা মানতে নারাজ নতুন নিয়ম। তাই আইন মানতে চাইলেও বিপাকে পড়েছেন কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের রাজশাহী উপমহাপরিদর্শকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, একজন শ্রমিকের সর্বোচ্চ ৫০ কেজি ওজনের বেশি বস্তা বহনকে সরকার ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী এ ঘোষণা দেওয়ার পর হাইকোর্টের একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। কোনো হিমাগারে ৫০ কেজির বেশি ওজনের বস্তা রাখা যাবে না। তাহলে শ্রম আইন অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করার বিধান রয়েছে।

পড়তে পারেন: পানিবন্দি জমির আলু তুলতে ব্যস্ত চাষিরা

এ বিষয়ে কথা হয় রাজশাহী জেলা হিমাগার মালিক সমিতির হাজী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, কোল্ড স্টোরেজে ৫০ কেজির বেশি বস্তা রাখা যাবে না এই মর্মে হাইকোর্ট একটি নির্দেশনা জারি করেছে। আমরাও চাই এটি বাস্তবায়ন হোক। তবে, একটু সমস্যাও আছে। আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা ৭০-৭৫ কেজির বস্তা নিয়ে আসলে আমরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি। কিছু করার থাকে না।

একই কথা জানান হিমাগার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, শ্রমিকদের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে হাইকোর্ট একটা রায় দেন। এতে বলা হয়, ৫০ কেজি ওজনের বেশি বস্তা একজন শ্রমিক বহন করতে পারবেন না। ২০১৮ সাল থেকে এই আইন কার্যকর করার জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে তাঁদের বলা হচ্ছে। এ আইন অমান্য করলে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। কিন্তু এরপর আবার আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা ৭০-৭৫ কেজির বস্তা আনা শুরু করেন। এ নিয়ে তাঁরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন।

পড়তে পারেন: “লতুন আলু বেচনো ২০ টেকা, আজকা মেলা কমে গেছে”

বস্তায় আলু বহনের এই নতুন নিয়ম মানতে পারবেন না বলে বলছেন কৃষকরা। জেলার তানোর উপজেলার পাঁচন্দর গ্রামের আলুচাষি রেজাউল করিম বলেন, আলু রাখার নতুন নিয়ম ৫০ কেজির বস্তা করতে হবে। এটা চাষিদের পক্ষে সম্ভব নয়। এমনিতেই আলুচাষিরা ক্ষতিগ্রস্তের মধ্যে। ৬৫ কেজির বস্তা স্টোরেজে রাখলে প্রতি বস্তায় ১৫ কেজি আলু সেভিংস হয়। নতুন নিয়ম করলে আরেকটি বস্তা বাড়তি লাগবে। আর ২০০ বস্তা আলু রাখতে প্রায় ২০ হাজার টাকা বস্তা কেনার প্রতি চলে যাবে। এটা সম্ভব নয়।

একই এলাকার আলুচাষি শরিফ উদ্দিন বলেন, প্রায় প্রতিবছরই কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের সাথে কোনো না কোনো কারণে বিপত্তি বাধে। হিমাগারের মালিকপক্ষ নানান অজুহাত দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে থাকেন। সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখেন দালালরা। তারাই কৃষকের পকেট কাটে।

পড়তে পারেন: আগাম আলুতেও হচ্ছে না লাভ, বিপাকে চাষিরা

জেলার মোহনপুরে ২০০ আলুচাষির সমাবেশে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাংসদ মো. আয়েন উদ্দিন চাষিদের পক্ষ নিয়ে বলেন, ‘আমরা কেউই আইনের বাইরে নই। আইনকে আমাদের অবশ্যই সম্মান করতে হবে। পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকেও সহযোগিতা করতে হবে। আমি কথা দিচ্ছি, বিশেষ করে এবার কোনো হিমাগারে প্রতি বস্তায় ৬৫ কেজি আলু মজুত রাখলে ভ্রাম্যমাণ আদালত ধরবেন না। কারণ, আইন মানুষের জন্য।’

পড়তে পারেন: আলুর মণ ২৪০ টাকা, বিপাকে চাষিরা

কৃষকের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘চাষি ও ব্যবসায়ীরা আলু রাখার বস্তাসহ আনুষঙ্গিক কাজ সেরে ফেলেছেন। তাই আগের নিয়মেই আলু নেওয়ার জন্য হিমাগারমালিকদের প্রতি আহ্বান জানাই।’

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের রাজশাহী উপমহাপরিদর্শক মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সভায় প্রচলিত আইন সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করা হয়েছে। এই আইন অমান্য করলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী শ্রম আদালতে মামলা করা যাবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ