মৎস্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশী শুটকি উৎপাদন করা হয়ে থাকে। জেলেদের একমাত্র আয়ের উৎস হিসেবে হাজার বছরের ঐতিহ্য শুটকি। মাছ শুকিয়ে তা সংরক্ষণ করার পর দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হয়। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বিষমুক্ত শুটকিতে ডলার আয়ের স্বপ্ন দেখছেন বরগুনার তালতলী উপজেলার ৫টি চরের জেলেরা।

জেলেরা বলছেন, বিষমুক্ত শুটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। বছরে এখানে প্রায় ৩-৪ হাজার মন বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনে প্রতিদিন কাজ করছেন অন্তত ৪ হাজার শ্রমিক। এই চরের শুঁটকি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, খুলনা ও জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হয়। শুটকি প্রস্তত করার সময় কোনো প্রকার কীটনাশক বা অতিরিক্ত লবণ দেওয়া হয় না বলে এই এলাকার শুঁটকির চাহিদা ক্রেতাদের নিকট খুব বেশি।

মৎস্য বিভাগ ও জেলেদের সূত্রে জানা গেছে, এক মৌসুমে তালতলী উপজেলার আশারচর, সোনাকাটা, মরানিদ্রা, ছোট আমখোলা, বড় আমখোলা ও নিশানবাড়িয়া খেয়াঘাটের চরে ৩ থেকে ৪ হাজার মন শুঁটকি উৎপাদন হয়ে থাকে। এই শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

তালতলীর শুঁটকি সম্পূর্ন বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত। তালতলীর শুঁটকি খেতে সুস্বাদু ও মজাদার হওয়ায় দেশে এবং দেশের বাইরেও এই শুঁটকির চাহিদা রয়েছে প্রচুর।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

নওগাঁয় দেশি মাছে পরিপূর্ণ আত্রাই নদী পাড়ের শুটকি পল্লী

৪টি মাছের দাম ১৮ লাখ টাকা!

মাছ চাষের নতুন দিশা দেখাচ্ছে “ক্যারিমীন”

মাছ চাষে কোটিপতি ফরহাদ, চলতি বছরে ৭০ লাখ!

মরানিদ্রা শুঁটকি পল্লীর নারী শ্রমিক রাহেলা বেগম বলেন, এই হানে শুঁটকিতে কোন ওষুধ দেওয়া হয় না। ছোট আমখোলা গ্রামের শ্রমিক আবু তালেব জানান, এই হানে মাছ হুগাইতে কোন ওষুধ দেই না মোরা। ওষুধ দেওয়া মানুষের স্বাস্থ্যের লইগ্যা খুব খারাব।

উপকূলীয় বরগুনার তালতলী উপজেলার আশারচর, সোনাকাটা, মরানিদ্রা, ছোট আমখোলা, বড় আমখোলা ও নিশানবাড়িয়া খেয়াাঘাটের চরে এখন শুঁটকি তৈরীর ভরা মৌসুম। শুঁটকি পলীøতে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ছয় মাস ধরে চলে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করণের কাজ। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৩-৪ হাজার শ্রমিক দিনরাত কাজ করছেন।

তাদের সঙ্গে কমপক্ষে ৩-৪ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। এই সময় গুলোতে সরব থাকে শুঁটকি পল্লির ক্রেতা, বিক্রেতা ও শ্রমিকরা। প্রতিটি শুঁটকি পল্লি থেকে প্রতি সপ্তাহে অন্তত দেড় শ’ মন শুঁটকি বিক্রি হয়।

বঙ্গোপসাগর থেকে কাঁচা মাছ শুঁটকি পল্লিতে নিয়ে আসার পর নারী এবং পুরুষ শ্রমিকরা সেগুলো পরিষ্কার করেন। এরপর মাছগুলো পরিস্কার পানিতে ধুয়ে মাচায় এবং মাটিতে বিছানো পাটিতে বিছিয়ে শুকানো হয়। ছয়-সাত দিনের রোদে মাছগুলো শুকিয়ে শক্ত হয়। প্রস্তত থাকে ক্রেতা, পাইকার ও ব্যবসায়ীরা।

বর্তমানে প্রতি কেজি ছুরি মাছের শুঁটকি ৭০০-৮০০ টাকা, রূপচাদা ১ হাজার থেকে দেড় হাজার, মাইট্যা ৮০০ থেকে এক হাজার, লইট্যা ৬০০ থেকে ৭০০, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৯০০ এবং অন্যান্য ছোট মাছের শুঁটকি ৩০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

কিভাবে মাছ চাষ শুরু করবেন, পরামর্শ কোথায় পাবেন?

সবজি চাষে কপাল খুলেছে আতোয়ার রহমানের

ওজন কমাবে শীতকালের যেসব সবজি

ঘাসখেকো গ্রাস কার্প মাছ চাষ পদ্ধতি

জানা যায়, শত শত শ্রমিক শুঁটকি পল্লীতে কাজ করছেন। সাগর থেকে একের পর এক ট্রলার এসে কিনারে ভিড়ছে। ট্রলার নোঙ্গর করা মাত্র শ্রমিকরা ট্রলারের খোল থেকে মাছ তুলতে ব্যস্ত হয়ে উঠে পরছেন ট্রলারে। মাথায় মাছের ঝাকা নিয়ে ছুটছেন চরে। মাটিতে মাছ ফেলা মাত্র কেউবা মাছ ধুয়ে পরিস্কার করছেন। কেউবা আবার বড় মাছ ফালি করছেন। কেউবা আবার পরিস্কার করা মাছ মাচা কিংবা পাটিতে বিছিয়ে শুকানোর কাজ করছেন। এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। এখন যেন তাদের দম ফালানোর সময় নেই।

জেলে আঃ রহমান জানান, তালতলীর শুঁটকি পল্লীতে ২৫ প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি করা হয়। শুঁটকির মধ্যে রয়েছে রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্টা, বৈরাগী, ফাইসা, তপসী, বাইন ও ছোট পোয়া অন্যতম। এছাড়াও চিংড়ি, ভোল, মেদসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছেরও রয়েছে অনেক চাহিদা। এখান থেকে ছোট চিংড়ি মাছের শুঁটকি পোল্ট্রি ও ফিস ফিড তৈরীর জন্য দেশের নামী দামী কোম্পানীগুলোতে সরবরাহ হয়ে থাকে।

খবির উদ্দিন নামের আরেক জেলে জানান, তালতলীর আশার চর, সোনাকাটা, মরানিদ্রা, ছোটআমখোলা, বড় আমখোলা ও নিশান বাড়িয়ার চরে সম্পূর্ন বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদন করে থাকি আমরা। মানুষের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে নিজেরাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি শুঁটকিতে বিষ মিশাবো না। রোদে শুকিয়ে প্রাকৃতিক ভাবে শুঁটকি তৈরী করি আমরা। তাই আমাদের শুঁটকি দেশ এবং দেশের বাইরে অনেক চাহিদা রয়েছে।

শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. রুপচাঁন হাওলাদার বলেন, তালতলীতে উৎপাদিৎ শুঁটকি বিষমুক্ত হওয়ায় চাহিদা খুব বেশী। এখানকার শুঁটকি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, খুলনা ও জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আমরা চালান করি। তবে তিনি আরো জানান, বিদেশেও তালতলীর শুঁটকির অনেক চাহিদা রয়েছে। এখানকার অনেক শুঁটকি স্থানীয় মানুষজনের মাধ্যমে ভারতে যাচ্ছে। সেখানে এর চাহিদা প্রচুর।

তালতলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল আলম বলেন, তালতলী উপজেলায় উৎপাদিত শুঁটকি বিষমুক্ত এবং স্বাস্থ্য সম্মত। দেশ এবং দেশের বাইরে তালতলীর বিষমুক্ত শুঁটকির চাহিদা রয়েছে প্রচুর। বিদেশে শুঁটকি রপ্তানির ব্যবস্থা করা গেলে জেলেরা অনেক লাভবান হবে। তালতলীর শুঁটকি রপ্তানির জন্য মৎস্য অধিদপ্তরে সুপারিশ পাঠানো হবে।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, বরগুনার তালতলীর আশারচর, সোনাকাটা, মরা নিনদ্রা, ছোট আমখোলা, বড় আমখোলা ও নিশান বাড়িয়ার চরসহ ৫টি চরে উৎপাদিৎ শুঁটকি স্বাস্থ্য সম্মত এবং বিষমুক্ত। তাই দেশ এবং দেশের বাইরেও রয়েছে এর প্রচুর চাহিদা।

বিশেষ করে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন ও দুবাইতে শুঁটকির চাহিদা অনেক বেশী। এসব দেশে তালতলীতে উৎপাদিৎ শুঁটকি রপ্তানি করা গেলে জেলেরা অনেক লাভবান হবে। আমরা এ বিষয়ে সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করবো। বিষমুক্ত শুটকিতে ডলার আয়ের স্বপ্ন দেখছেন জেলেরা সংবাদের তথ্য যায়যায়দিন থেকে নেওয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ