নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন বাজারগুলোতে ব্রয়লার মুরগির প্রতিকেজিতে কমেছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এতে বিপাকে পড়েছেন পোল্ট্রি খামারিরা। তারা বলছেন, ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচের তুলনায় কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। চলতি বাজারদরে প্রতিকেজিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে মুরগির চাহিদা কমে যাওয়া ও আমদানি বাড়ার কারণে হটাৎ দাম কমে গেছে। শীঘ্রই দাম বাড়াবে বলেও জানান তারা।

গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ (বি.পি.কে.আর.জে.পি) এবং পোল্ট্রি প্রফেশনাল’স বাংলাদেশ(পিপিবি) প্রকাশিত বাজার দরে দেখা যায়, অন্তত ২০ অঞ্চলে কমেছে ডিম-মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগির কেজি পাইকারিতে ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ফলে খামারি পর্যায়ে আরো ৫ টাকা কমে ১১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে ব্রয়লার মুরগি। অথচ, প্রতিকেজি ব্রয়লার উৎপাদনে ১৩৫ থেকে ১৩৮ টাকা খরচ পড়ে। খামারিদের তথ্যমতে, কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা লোকসান দিচ্ছেন তারা।

পোল্ট্রি সংগঠনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাস দুয়েক আগে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা তোলা বন্ধ ছিল ফলে গত দু মাস সামান্য আমদানি কমে। ফলে দাম বেড়ে যায়। এখন মাংস উৎপাদনে ফিরেছেন খামারিরা। একযোগে বেশি উৎপানে নামার কারণে দাম পড়ে গেছে। গত কয়েক সপ্তাহ রেডি বাচ্চার দাম তুলনামূলক কম থাকার কারণে খামারে বাচ্চা তুলতে আগ্রহী হয় খামারিরা। ৩০ দিনের মধ্যে যেহেতু ব্রয়লার মুরগি বিক্রির উপযোগী হয় সে হিসেবে আমদানি বাড়ে।

পোল্ট্রি সংশ্লিষ্টরা জানায়, খাদ্যের দামের প্রভাবে বাজারে পোল্ট্রি পণ্যের দাম উঠানামা করছে। খামারিরা খাদ্যের দাম নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। তারা বাচ্চা তুলতে একধাপ আগালেও দুই ধাপ পিছিয়েছেন। বছরের শুরুতে সরকারি সহযোগিতার দিকে বেশ আশাবাদী ছিলেন খাত সংশ্লিষ্ট সকলেই। চেয়েছিলেন খাদ্যের দাম কমানো হবে। উল্টো খাদ্যের দাম বাড়তি রেখে কমে গেছে মুরগির দাম। কিন্তু এই চালান যেসব খামারি ধরতে পেরেছেন তারা মোটামুটি লাভবান হতে পেরেছেন।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

ধ্বংসের পথে লেয়ার, ব্রয়লার, সোনালী মুরগির খামারিরা

মুরগির কেজিতে উধাও ১৫ থেকে ২০ টাকা, ডিমের দামে উঠানামা

সর্বনিম্নে নেমেছে ডিমের দাম, প্রতিপিসে লোকসান ২ টাকা

সহজে ব্যাংক ঋণ ও খাদ্যের দাম কমানোসহ ৬ দফা দাবিতে খামারিদের বিক্ষোভ

ব্রয়লার খামারি সাদাত হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, গত দুমাস ব্রয়লার মুরগির দাম ভালো থাকার কারণে একযোগে খামারিরা আবার বাচ্চা তোলা শুরু করেছেন। আর যেহেতু ব্রয়লার মুরগি ৩০ থেকে ৩২ দিনের মধ্যে হয়ে যায় সেহেতু অনেকেই আগ্রহ করেছেন। এখন সবার মুরগি বড় হয়ে গেছে। একসাথে বাজারে এনেছেন। দাম কমে গেছে।

এই খামারি জানান, এককেজি ব্রয়লার করতে হিসেব করলে, ৫০ টাকা পিস বাচ্চা কিনে প্রতিকেজিকে খাবার খাওয়াতে হয় কমপক্ষে ৭০ টাকার। ভ্যাকসিন ও আরোও খরচ হিসেবে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন করতে খরচ করতে হয় ১৩৫ টাকার মতো। আর এখন বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। প্রতিকেজিতে হিসেব করে কোন লাভ নাই। খামারি পর্যায়ে ১২০-১২৫ টাকা দাম, খুচরা বাজারে ১৫০ টাকা কেজি। আমরা যা লাভ করতে পারিনা সারামাস খেটে ব্যবসায়ীক দালালরা তা এক দু ঘন্টার মধ্যে করে নেয়।

মুরগি দোকানদার মিঠু হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, পোল্ট্রি মুরগি ১৫০ টাকা দরে বেঁচা হচ্ছে। ব্রয়লারের আমদানী বেড়েছে। এখন মুরগির খামারিরা বিপদে আছে। দাম কমতে থাকলে রাতের মধ্যে ১০ টাকা কেজিতে নাই হয়ে যায় ফলে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ব্রয়লার মুরগির দাম কমছে কারণ বাজারে ব্রয়লার মুরগি একটু আমদানি বেশি। সোনালি ২৬০ টাকা, কক মুরগি ২৬০ টাকা, হাঁস ৪৫০ টাকা, রাজহাঁস ৪৩০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।

পোল্ট্রি খামারি ও উদ্যোক্তা মুজিবুর রহমান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, মূলত প্রান্তিক এক হাজার-দু-হাজার মুরগির খামারিরা ধ্বংশ হয়ে গেছে। বাণিজ্যিকভাবে যেসব মুরগি ও ডিমের উৎপাদন হচ্ছে তা বাজারে আসলে দাম কমতে পারে। আমাদের দেশের সিন্ডিকেট সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ৪-৫ দফায় পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বেড়ে এখন আকাশচুম্বী। ১৮’শ টাকার খাদ্যের বস্তা এখন ৩৫’শ টাকা। সরকারের কোন পদক্ষেপ নেই।

রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, রাজশাহীর ৭০ শতাংশ খামার বন্ধ। বহুবার বলেছি বিভিন্ন জায়গায়। কোন কাজ হয়না। পোল্ট্রি ফিডের বর্তমান দাম খামার চালিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত নয়। ডিমের দাম উৎপাদন খরচের তুলনার কম। প্রতিপিস ডিমে ৩ টাকা লোকসান টাকা দিচ্ছেন খামারিরা। খাদ্যের দাম কমানো, প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, সটিক বাজার নির্ধারণ সবকিছু এখন করা জরুরি প্রয়োজন। তা না হলে পোল্ট্রি খাত টিকবে না।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ