নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: গত বছর ২০২১ সালে দেশে প্রায় ৬০ কোটি টাকার মধু আমদানি হয়েছে। এ ছাড়া মোমসহ মৌচাক থেকে পাওয়া অন্যান্য উপজাত বিক্রি হয় প্রায় ৫০ কোটি টাকার। সব মিলিয়ে দেশে মধুর বাজার প্রায় ৭৫০ কোটি টাকার। তবে আমাদের দেশে মধু চাষের সঠিক পদ্ধতি না জানার কারণে বিপুল সম্ভাবনাময় খাতে সেভাবে আয় হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরে দেশে মধু উৎপাদিত হয়েছে ১০ হাজার ৬৫৫ মেট্রিক টন (১ মেট্রিক টনে ১ হাজার কেজি)। এর আগের অর্থবছরে মোট মধু উৎপাদিত হয়েছিল ৪ হাজার ৬২২ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এক বছরে মধু উৎপাদন বেড়েছে ১৩০ গুণ।

এবারও শুরু হয়েছে শীতের মৌসুম। ইতোমধ্যে মাঠ জুড়ে সরিষার ক্ষেতের পাশে বসানো হয়েছে মৌ-চাষের বাক্স। এভাবে মধু চাষ করে ভাগ্য বদলে গেছে যশোরের শার্শা উপজেলার মো. মহসিন খানের। শুধু মহসিন নয় দেশের বিভিন্ন স্থানে মৌচাষিরা মধু উৎপাদন করছেন।

যশোরের শার্শা উপজেলার মো. মহসিন  উপজেলার নাভারণ বাজার এলাকার বাসিন্দা। তিনি আদর্শ মৌচাক প্রকল্পের স্বত্বাধিকারী। ২০০৭ সালেএই প্রকল্প চালু করেন। ১৫ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত আছেন। তিন শ্রমিক নিয়ে প্রতি বছর সব খরচ বাদ দিয়ে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করেন তিনি। তাঁর অভিজ্ঞাতার আলোকে মধু চাষের সঠিক পদ্ধতি জানাব আজ।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যেমন, শার্শা, নাভারণ, কুলপালা, বুরুজবাগানসহ বেশ কিছু এলাকায় মধু চাষ করি। ২৫০টির মতো বাক্স আছে। এসব মধু নিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসেন। সবাই “মধু মহসিন” নামেই আমাকে চেনেন। এমনই বলছিলেন তিনি।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

দেশে মধুর বাজার দেড় হাজার কোটি টাকার!

দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে অম্লমধুর লটকন

ভ্রাম্যমাণ মধু চাষে আলীমের ভাগ্যবদল

দেশের মাটিতে ভারতীয় আঙুর চাষে সফল মহাসিন

মহসিন বলেন, শীতকালে মধু চাষিরা বিভিন্ন এলাকায় যেখানে সরিষা ফুল ফোটে, সেখানে অনেকগুলো কলোনি (বাক্স) ব্যবহার করে মধু সংগ্রহ করেন। মধু সংগ্রহ করতে এক মাস লাগে। একটি কলোনি থেকে দুই কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়। এটাই হচ্ছে খাঁটি মধু। এখন ফুল থেকে মধু আহরণ চলছে পুরোদমে। এরপর সংগ্রহ করা মধু বাজারে বিক্রি করবো। সাত দিনে একবার করে ভেতরে থাকা মৌ-বাক্স বের করে মধু সংগ্রহ করি। প্রতি কেজি মধু ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি করি।

মধু চাষে আগ্রহী ব্যক্তিদের উদ্দেশে মহসিন বলেন, বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষ করতে চাইলে যে কেউ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা খরচ করলেই ব্যবসা শুরু করা সম্ভব হয়। কম খরচে ভালো লাভ হয়। তবে ব্যবসা করতে চাইলে আগে ট্রেনিং নিতে হবে। শীতকালে কলোনির (বাক্সের) ওপর বস্তা দিয়ে ঢেকে রাখতে হয় এবং বৃষ্টি হলে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। তা না হলে কলোনির ভেতরে পানি ঢুকে মধু নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, মৌমাছি চাষ সাধারণত আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে। ভালো আবহাওয়া থাকলে এক মাসেই চার-পাঁচ বার সংগ্রহ করা যায়। প্রতিবারে একটি বাক্স থেকে প্রায় দুই কেজি করে মধু পাওয়া যায়। তবে মৌমাছির বিভিন্ন রকম রোগ হয়, তাই প্রতি মাসে বাক্স থেকে ট্রেগুলো বের করে মৌমাছি সুস্থ আছে কিনা দেখতে হবে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

চা বাগানে নতুন ফসল গোলমরিচ চাষে সাফল্য

নতুন ফসল চিয়ার কেজি ৫’শ টাকা, ভাগ্য বদলাচ্ছে কৃষকের!

দেশে এবার ভোজ্য তেলের যোগান দিতে নতুন ফসল ‘সাউ পেরিলা-১’

নতুন পদ্ধতি ‘ভার্টিক্যাল ফার্মিং’, হেক্টরে হাজার টন ফসল উৎপাদন

এসব মৌমাছিকে অনেক সময় বিভিন্ন পোকা যেমন মোম বিটল পোকা, ছাই পোকা, মদ পোকা, লাবরা পোকা ইত্যাদি আক্রমণ করে। তখন তামাক পাতা পুড়িয়ে ধোঁয়া সৃষ্টি করে পোকা তাড়াতে হয়। এছাড়া ফরমিক এসিড পানির সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রেয়ের মাধ্যমে পোকা তাড়ানো যায়। বর্ষা মৌসুমে যখন কোথাও ফুল থাকে না তখন মৌমাছিকে চিনি খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হয়।’

মহসিনকে দেখে মধু চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন একই এলাকার বাসিন্দা মিকাইল হোসেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে মৌ-চাষ করছেন তিনি। মিকাইল বলেন, মহসিনের কাছ থেকে আমি প্রশিক্ষণ নিয়ে মধু চাষ শুরু করেছি। এটা একটি লাভজনক চাষ। কম খরচে বেশি আয় করা যায়। বর্তমানে আমার ১৫টি বাক্স আছে। খরচ বাদ দিয়ে ভালো আয় হয়। সামনে বাক্সের পরিমাণ আরও বাড়াবো।

জানতে চাইলে শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ কুমার মণ্ডল এগ্রিকেয়ার২৪.কম বলেন, সারাদেশের ন্যায় শার্শা উপজেলায়ও মধু চাষ করছেন চাষিরা। এটি অবশ্যই একটি লাভজনক ব্যবসা। ভালো দাম পেয়ে থাকেন চাষিরা। মহসিন আমাদের পরিচিত চাষি। নানা পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করা হয়। নতুন কেউ যদি মধু চাষে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে তাকেও সহযোগিতা করা হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ