একদিকে কমছে ডিমের দাম অপরদিকে খাদ্য ও ভ্যাকসিনের দাম বাড়ছে। অপরদিকে সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে দিন নিঃস্ব হচ্ছে শত শত প্রান্তিক খামারি। পোল্ট্রি খাত রক্ষায় নেই কোন নীতিমালা, নেই তেমন কার্যকরী উদ্যোগ। বলা বাহুল্য যাঁতাকলে পিষ্ট প্রান্তিক খাামারিরা।

নারিশ পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারী লিমিটেড রংপুর জোনের সিনিয়র কাস্টমার সার্ভিস অফিসার ডাঃ মোঃ শাহ্-আজম খান দেশের পোল্ট্রি খাত ও ব্রয়লার শিল্প নিয়ে লিখেছেন। ব্রয়লার শিল্পকে বাচাঁতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আলোচনা করেছেন।

দেশের প্রাণিজ প্রোটিন চাহিদার সিংহভাগ পূরণ হচ্ছে সুস্বাদু ব্রয়লার মাংস দিয়েই। মার্কেটে সব থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে পুষ্টিকর মাংস খেতে চাইলে ব্রয়লার নামটি সবার আগেই চলে আসবে। আর বর্তমান করোনাকালে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এর গুরুত্ব অপরিসীম।তবে দু:খজনক হলেও সত্য দেশের বাজারে গত ২০ বছরেও ব্রয়লার সেক্টরের কোন নিয়মনীতি গড়ে উঠে নাই-এটাই ব্রয়লার শিল্প বিকাশের সব থেকে বড় প্রতিবন্ধকতা।

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে ব্রয়লারের বিকল্প বের করা বর্তমান সময়ে খুবই কঠিন একটি বিষয়। তাই শত অপপ্রচার ও মিথ্যা অপবাদ নিয়েও এই সেক্টর প্রতিনিয়ত এগিয়ে গেছে ধাপে ধাপে। ব্রয়লারের মার্কেট চ্যানেলে খামারী (উৎপাদক) থেকে ভোক্তা পর্যন্ত আসতেই কেজিতে ২০-৩০ টাকা বৃদ্ধি হয়।

বাচ্চা ও রেডি ব্রয়লারের বাজার মূল্য ঠিক যেন বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের মতো। প্রতিদিন এর উপর/নিচ চলতেই থাকে। আর এর যাঁতাকলে পিষ্ট প্রান্তিক খাামারিরা। সময় এসেছে এই সেক্টরকে একটি নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসার। খামারী বাচঁলে, বাচঁবে দেশ; শক্তিশালী হবে দেশের অর্থনীতি। ব্রয়লার শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারী ও বেসরকারি উভয় দিক হতে সহযোগিতা প্রয়োজন।

ব্রয়লার শিল্পকে বাচাঁতে হলে প্রয়োজন-
১। ব্রয়লার চিকস-এর মূল্যের স্থিতিশীলতা বছরের সব সময় ৩৫-৪০ টাকার মধ্যেই রাখতে হবে। এক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও ব্রিডারস্ এসোসিয়েশন-এর মাঝে নিবিড় সমন্বয় প্রয়োজন ও তা কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। কাজটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয় প্রয়োজন সংশ্লিস্ট সকলের আন্তরিকতা।
২। লাইভ ব্রয়লার সরকার কতৃক নির্ধারিত মূল্যে খামার হতে ক্রয়, যেমন ১২০-১৩০ টাকা কেজি ও ভোক্তা পর্যায়ে মার্কেটে মূল্য যেমন ১৪০-১৫০টাকা খুচরা বিক্রয়মূল্য (স্থানভেদে) নির্ধারণ করতে হবে।
৩। সরকারী ভাবে বিনামূল্যে খামারে ভ্যাকসিন এর ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। খামারে বীমা সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫। ব্রয়লার খামারীদের স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬। নামহীন মিডিয়ার অপপ্রচার এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে।
৭। ব্রয়লার মাংস খাওয়ার উপকারীতা বিষয়ে গণসচেতনা তৈরি করতে হবে।
৮। অভিজ্ঞ ভেট-ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে ব্রয়লার খামার পরিচালিত করতে হবে; তাই ফিল্ড পর্যায়ে সংশ্লিষ্টদের (ডিভিএম) অধিক নিয়োগ দিতে হবে।

যাঁতাকলে পিষ্ট প্রান্তিক খাামারিরা লেখাটি লিখেছেন ডাঃ মোঃ শাহ্-আজম খান ডিভিএম, এমএস ইন এনিমেল সায়েন্স (হাবিপ্রবি), নারিশ পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারী লিমিটেড রংপুর জোনের সিনিয়র কাস্টমার সার্ভিস অফিসার।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ