মোফাজ্জল বিদুৎ, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: চলতি বছরের প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষি খাতে ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং রবি মৌসুমে ফসলের উৎপাদন বাড়াতে কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় রাজশাহীতে সার ও বীজ সহায়তা পাচ্ছেন ২৫ হাজার কৃষক।

রাজশাহী জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় জেলায় রবি ২০২০-২১ মৌসুমে ২৫ হাজার জন কৃষকের জন্য ২ কোটি ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৯০০ টাকার সার ও বীজ বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

জানা গেছে, রবি মৌসুমে গম, সরিষা, সূর্যমুখী, চীনাবাদাম, মসুর, খেসারি, টমেটো ও মরিচ ফসলের জন্য জেলার নয়টি উপজেলার অধিক ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা দেয়া হবে। এর মধ্যে জেলার পবা উপজেলায় ১ হাজার ৩৫০ জন কৃষককে বীজ খাতে বরাদ্দ ১২ লাখ ২৯ হাজার ৮০০ টাকা, সার খাতে বরাদ্দ ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা, অন্যান্য খাতে বরাদ্দ ৭১ হাজার টাকাসহ মোট আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৪ লাখ ১৬ হাজার ৭৩০ টাকা।

উপজেলা অনুযায়ী, তানোর উপজেলায় ১ হাজার ৫০ জন কৃষককে বীজ খাতে ১১ লাখ ৬১ হাজার ৬০০ টাকা, সার খাতে ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা, অন্যান্য খাতে ৯৬ হাজার ৯০০ টাকাসহ মোট আর্থিক বরাদ্দ ১৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৯০ টাকা; মোহনপুরে ৪ হাজার ২০০ জন কৃষককে বীজে ১৯ লাখ ৬৩ হাজার ৮০০ টাকা, সার ৭ লাখ ৬৪ হাজার ৭৫০ টাকা, অন্যান্য খাতে ২ লাখ ৮৫ হাজার ৬৩০ টাকাসহ মোট আর্থিক বরাদ্দ ৩০ লাখ ১৪ হাজার ১৮০ টাকা।

বাগমারায় ১১ হাজার ৩০০ জন কৃষককে বীজ খাতে ৭৪ লাখ ৬৪ হাজার, সারে ১৫ লাখ ৮২ হাজার , অন্যান্য খাতে ৮ লাখ ৫শত ৬০ টাকাসহ মোট বরাদ্দ ৯৮ লাখ ৪৭ হাজার ৬০ টাকাৎ; দুর্গাপুরে ১ হাজার ২৫০ জন কৃষককে বীজ খাতে ৮ লাখ ৮০ হাজার ৬০০ টাকা, সার খাতে ১ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা, অন্যান্য খাতে ৭৮ হাজার ৫০ টাকাসহ মোট আর্থিক বরাদ্দ ১১ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকারে সহায়তা দেওয়া হবে।

আরোও পড়ুন: শর্ত জটিলতায় প্রণোদনা ঋণে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক, খামারিরা

রাজশাহীতে বন্যায় আউশের ক্ষতি ৩১ কোটি, বিপাকে কৃষক

পুঠিয়া উপজেলায় দেড় হাজার কৃষককে বীজ খাতে আর্থিক বরাদ্দ ১০ লাখ ৮১ হাজার ৬০০ টাকা, সার খাতে আর্থিক বরাদ্দ ১ লাখ ৯২ হাজার ৭৫০ টাকা, অন্যান্য খাতে ৯৬ হাজার ৫৯০ টাকাসহ মোট আর্থিক বরাদ্দ ১৩ লাখ ৭০ হাজার ৯৪০ টাকা; গোদাগাড়ীতে ২ হাজার ৫০ জন কৃষককে ১৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকার বীজ, ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকার সার, অন্যান্য খাতে ১ লাখ ২৯ হাজার ৭১০ টাকাসহ মোট ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৩১০ টাকার আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

চারঘাটে ৭৫০ জন কৃষককে ৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকার বীজ, ৬৪ হাজার ২৫০ টাকার সার, অন্যান্য খাতে বরাদ্দ ৪৭ হাজার ৪৬০ টাকাসহ উপজেলায় মোট আর্থিক বরাদ্দ ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৯১০ টাকা। বাঘা উপজেলায় ১ হাজার কৃষককে বীজ খাতে ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকা, সারে ৯৮ হাজার ২৫০ টাকা, অন্যান্য খাতে ৬৪ হাজার ৯৮০ টাকসহ মোট আর্থিক বরাদ্দ ১০ লাখ ৬২ হাজার ২৩০ টাকা। এ নিয়ে জেলায়  ২৫ হাজার জন কৃষককে দেওয়া মোট আর্থিক বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কোটি ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৯০০ টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত একটি কৃষক পরিবার এক বিঘা জমির জন্য গমের ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ২০ কেজি বীজ, সরিষার ক্ষেত্রে এক কেজি বীজ, চীনাবাদামের ক্ষেত্রে ১০ কেজি বীজ, মসুরের ক্ষেত্রে ৫ কেজি, খেসারির ক্ষেত্রে ৮ কেজি বীজ, সূর্যমুখীর ক্ষেত্রে এক কেজি বীজ, টমেটোর ক্ষেত্রে ০.০৫ কেজি বীজ ও মরিচের ক্ষেত্রে ০.৩০ কেজি বীজ পাবেন। প্রত্যেক কৃষক সর্বোচ্চ ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার সহায়তা হিসেবে পাবেন।

আরোও পড়ুন: রাজশাহীতে বন্যায় পান বরজের ক্ষতি ১১ কোটি ছাড়িয়ে

রাজশাহীতে বন্যায় রোপা আমনের ক্ষতি ৫ কোটি ছাড়িয়ে

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মোছা: উম্মে ছালমা (শস্য) এগ্রিকেয়ার ২৪.কমকে জানান, এবার দফায় দফায় বন্যায় রাজশাহীর ৩৮ হাজার ৪৫০ জন কৃষক ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছেন। এর মধ্যে ২৮ হাজার ৯০৩ দশমিক ৫ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। যার আর্থিক ক্ষতি ৫১ কোটি ১৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং রবি মৌসুমে ফসলের উৎপাদন বাড়াতে পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় জেলায় নয় উপজেলার ২৫ হাজার জন কৃষককে ২ কোটি ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৯০০ টাকার সার ও বীজ সহায়তা দিচ্ছেন সরকার। একই সঙ্গে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় রবি মৌসুমের জন্য সার ও সাত প্রকার বীজ বাবদ ২ কোটি ৩৩ লাখ ৪৩ হাজার ৮০০ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এতে জেলার নয় উপজেলার ২১ হাজার ৪০০ জন কৃষক এসব সহায়তা পাবেন।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে জেলা কৃষি পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির বৈঠকে উপজেলা পর্যায়ে বিতরণের বিভাজন সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। ওই তালিকা অনুযায়ী খুব শীঘ্রই এসব সহায়তা কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। আশা করছি, কৃষকদের সঠিকভাবে এসব সহায়তা দেওয়া হলে এবং এর যথাযথ ব্যবহার হলে বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়া অনেকটাই সম্ভব হবে। এজন্য কৃষি বিভাগ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

রাজশাহীতে সার ও বীজ সহায়তা পাচ্ছেন ২৫ হাজার কৃষক। তারা বলছেন, বন্যার পানি খুব দ্রুত নেমে যাচ্ছে। খুব শিগগিরই জমি থেকে পানি সরে যাবে এবং জমি প্রস্তুতের কাজ শুরু হবে। তাই সময় মত এসব প্রণোদনা উপকরণ কৃষকের আর্থিক সংকটে সহায়তা হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ