মোফাজ্জল বিদ্যুৎ, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীর মাঠজুড়ে হলুদের ঢেউ। জেলার নয় উপজেলায় মাঠের পর মাঠ চাষ হয়েছে সরিষা। এবার কৃষক ও সংশ্লিষ্ট অফিস বাম্পার ফলনের আশা করছেন। দেশের ঋতু পরিক্রমায় হেমন্ত ও শীত ঋতুতে মাঠে মাঠে সরিষার চাষ হয়।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৪ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় চাষ হয়েছে ২১ হাজার ৩৪৮ হেক্টর জমিতে। এখানে চাষ হওয়া সরিষা দেশের মোট চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণে ভূমিকা রাখে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

রাজশাহীর প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ সরিষা ফুলের অপূর্ব হলুদে ঢেউ খাচ্ছে। চোখ জুড়ানো দৃশ্য আর সরিষার ফুলে আকৃষ্ট হয়ে মধু আহরণে ব্যস্ত মৌমাছিরা। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা মাঠ। প্রকৃতির সৌন্দর্য্য যেমন বাড়িয়ে দিয়েছে তেমনি অর্থনৈতিক সচ্ছলতার হলুদ স্বপ্নে বিভোর কৃষকরা।

আরও পড়ুন: শীতকালীন সবজিতে ভাগ্য বদলের চেষ্টা রাজশাহীর চাষিদের

গত মৌসুমে রাজশাহীতে ২৪ হাজার ২৫২ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছিল ২৩ হাজার ১৯৯হেক্টর জমিতে। ওই বছর হেক্টর প্রতি গড় ফলন ছিলো ১ দশমিক ৪৫ মেট্রিক টন।

জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমন ধান ওঠার পর ইরি বোরো ধান রোপণের আগে জমি অলস পড়ে থাকে। এ সময় সরিষা চাষ করা হয়। ফলে একদিকে যেমন তেলের চাহিদা মিটিয়ে অর্থনৈতিকভাব লাভবান হয়, অন্যদিকে জমিতে জৈব সারের ঘাটতি পূরণে বিরাট ভূমিকা রাখে।

বাগমারা উপজেলার আউচ পাড়া ইউনিয়নের কৃষক শাহ্ শামিম হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, এবার দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। বেশ ভালো ফুল ধরেছে। আসা করা যায় বাম্পার ফলন হবে।

তিনি বলেন, বীজ বোনার দুই মাসের মধ্যে সরিষার ফসল ঘরে তোলা যায় বলে অন্য আবাদের সমস্যা হয় না। সামান্য ইউরিয়া ছাড়া আর কোনো সারের প্রয়োজন হয় না সরিষায়। চারা গজানোর পর আগাছা পরিষ্কার করা ছাড়া তেমন কোনো শ্রমেরও দরকার হয় না। বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৬মণ সরিষার ফলন হয়।

আরও পড়ুন: রাজশাহীর পুঁই পালং যাচ্ছে ঢাকায়

কৃষক শামিম হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আমার সরিষা ভাঙানো তেলের ঘানি রয়েছে। প্রতি বছরই দেড় থেকে দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করি। তবে এবার সরিষার দাম ভালো রয়েছে। প্রতি মণ সরিষা এখন বিক্রি হচ্ছে ২৬০০ টাকায়। তবে সরিষার বাম্পার ফলন হলেও ভরা মৌসুমে ভালো দাম পাওয়া যায় না।

একই উপজেলার কৃষক আব্দুর রশিদ মিঞা বলেন, এ বছর বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার দুই বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। সরিষায় ভালো ফুল ধরেছে। আশা করছি ভলো ফলনও হবে।

আরও পড়ুন: আলু চাষে ব্যস্ত রাজশাহীর চাষিরা

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে রাজশাহী অঞ্চলেন সরিষা চাষ বাড়ছে। অঞ্চল ভেদে বারি-১৪, বারি-১৫ এবং করি-৭ জাতের সরিষা বেশি চাষ হয়। কৃষকরা এখনও সরিষা চাষ করছেন। ফলে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার বেশি সরিষা চাষ হবে বলে আশা করছি। এছাড়া উচ্চ ফলনশীল সরিষা ও আবাদ ভালো হওয়ায় গত বছরের থেকে এবার বাম্পার ফলন হবে বলে জানান তিনি।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ