মোফাজ্জল বিদ্যুৎ, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীর শামীম আরার ছাদটি যেন এক টুকরো ‘গ্রাম’। প্রায় ৮০ রকমের ফুল-ফলের গাছ নিয়ে বাড়ির ছাদে সবুজ বাগান করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন রাজশাহী নগরের মহিষ বাথান এলাকার গৃহবধূ শামীম আরা।

মনোরম পরিবেশে থরে থরে সাজানো তার বাড়ির ছাদ যেন পুরো একটি সবুজ উদ্যান। রোববার (০৮ নভেম্বর ২০২০) বিকেলে শামীম আরার ছাদ বাগানে গিয়ে দেখা যায়, জাম, জামরুল, এলাচী লেবু, ব্যানানা ম্যাংগো, পেঁপে, গৌড়মতি আম, সফেদা, মরিচ, কাগজি লেবু, মিষ্টি জলপাই, বাতাবি লেবু, নাশপাতি, বিভিন্ন ধরনের পেয়ারা, কমলা, কামরাঙ্গা, কদবেল, ড্রাগন, মিষ্টি তেঁতুল, থাইড্রপ আম, তেঁতুল, কালো পাতার ব্ল্যাক বক্স আম, কলা, থাই জাম, দেশি জাম, করমচা, বেদানা, অভিসারিকা আম, সুইট লেমন, অরুনা (আম) বনসাই করে রাখা হয়েছে।

মসলা জাতীয় গাছের মধ্যে আছে অল স্পাইস, তেজপাতা, দারুচিনি, গোলাপজামনসহ আরও অনেককিছু। শোভাবর্ধনকারী গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে, নীল অপরাজিতাসহ বিভিন্ন রঙের অপরাজিতা, ফায়ার বল, বিভিন্ন ধরনের জবা, এ্যাডেনিয়াম, এলামুন্ডা, ৩০ থেকে ৩৫ প্রজাতির গোলাপ, লাইলী-মজনু, বিভিন্ন ধরনের পাতা বাহার, সাইকাস, এ্যারোমেটিক জুঁই, টগর, কামিনী, মধুমালতি, মাধবীলতা, বিভিন্ন ধরনের অর্কিড, ক্যাকটাসসহ ৭০ থেকে ৮০ প্রজাতির ফুল।

আরোও পড়ুন:  বাড়ির ছাদে মাল্টা চাষে তাক লাগিয়েছেন রাজশাহীর সেন্টু

শামীম আরা এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, শৈশব থেকেই গাছের প্রতি তার চরম আগ্রহ ছিল। সেই থেকে শখ। বিয়ের পর থেকেই বাড়ির ছাদে গাছ লাগাতে শুরু করেন তিনি। নিজের প্রচেষ্টা আর স্বামীর অনুপ্রেরণা এবং সহযোগিতায় ২০১১ সালের শেষের দিকে মাত্র কয়েকটি ফুল-ফল এবং সবজির গাছ দিয়ে বাগান শুরু করেন।

তিনি জানান, বর্তমানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে তার স্বামী শিহাব উদ্দিন বাগানের পরিচর্যা করছেন। তিনি অবসর প্রাপ্ত একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। বাগানের পরিচর্যা করেই সময় কাটান তিনি। স্বামী শিহাব উদ্দিনের সাথে বাগান পরিচর্যায় সার্বিক সহযোগিতা করেন মেহেক নামে তার এক ভাতিজি।

এ পর্যন্ত সরকার কর্তৃক কোন স্বীকৃতি পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে বাগান করায় ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে দেশসেরা পুরস্কার পেয়েছি।

আরোও পড়ুন: ছাদ-বাগানে জাবপোকা দমন পদ্ধতি ও সতর্কতা

শামীম আরার স্বামী শিহাব উদ্দীন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, সারাবছর পরিবারে সবজি ও ফলের চাহিদা মেটান এই ছাদ বাগান থেকেই। সেইসাথে আতিথেয়তা তো আছেই। চাকরির অবসর পেয়ে বর্তমানে ছাদ বাগানের পরিচর্যায় সময় দেন।
শিহাব উদ্দীন বলেন, ছাদে বাগান করার ক্ষেত্রে মাটি পাওয়ার বিষয়টি বেশ সমস্যা হয়ে দেখা যায়। পদ্মা নদীর পলিমাটি সংগ্রহ করা হয়। সেই মাটির সঙ্গে গোবর, মিশ্র সার যোগ করা হয়। এরপরে সেগুলোতে গাছ লাগানো হয়।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ছাদে বাগান তৈরি খুবই পরিশ্রমের বিষয়। শামীম আরা ছাদ বাগান তৈরির মডেল। তিনি নিয়মিত বাগানের পরিচর্যা করেছেন। সাফল্য পেয়েছেন। ২০১৫ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয়ভাবে তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, রাজশাহী মহানগরের প্রায় দুই শতাধিক বাড়ির ছাদে ফুল ও ফলের চাষ করা হয়। বিশেষ করে নগরের আমচত্বর, পাঠান পাড়া, হেতেম খান, লক্ষীপুর, পুলিশ লাইন, কোর্ট স্টেশন, মহিষ বাথান উত্তর পাড়া এলাকাগুলোতে বেশি ছাদ বাগানে ফুল ও ফলের চাষ হয়।

তিনি আরও বলেন, ছাদ বাগান কৃষির একটি বড় সুবিধা। ইতিপূর্বে আমরা ছাদ বাগানের জন্য অনেককেই পরামর্শ দিয়েছি। ছাদ বাগানে কিছু বিশেষ ধরনের পোকামাকড় আক্রমণ করে। এই বিশেষ পোকা দমনের কৌশল গুলো নিয়ে তাদেরকে পরামর্শ দিয়েছি। এ ছাড়া ছয় মাস আগে রাজশাহী নগরের একশত ছাদ বাগান চাষিদের নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করেছি।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ