মেহেদী হাসান, জেলা প্রতিনিধি, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে মাথায় হাত পোল্ট্রি খামারিদের। দিনের পর দিন হতাশায় কাটাতে হচ্ছে। খামারে মুরগি বড় হওয়ার সাথে সাথে দুশ্চিন্তায় ঘুম আসছে না তাদের। মুরগি কেনার কেউ নেই। থাকলেও কিনতে চাচ্ছেন বাঁকিতে। হোটেল ও রেস্তোরাঁয় মাংস, ডিমের বিশাল অংশের চাহিদা বন্ধ হওয়ায় লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনছেন খামারিরা।

রাজশাহী জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার পোল্ট্রি খামার আছে। এর সাথে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ১০ হাজার এবং পরোক্ষভাবে আরো দেড় হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িয়ে রয়েছে বলে জানান রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশননের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক।

তিনি আরোও জানান, করোনার প্রভাবে মুরগির বাচ্চা, ডিম, মাংসের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। উৎপাদন আগের মতোই। তবে এই পরিস্থিতিতে বাজারজাতকরণের সমস্যার কারণে এবং সংরক্ষণের অভাবে মাংস ও ডিম খামারে পড়ে থাকে।

ব্রয়লারের বাচ্চা ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা বিক্রি হতো। এখন ৫ টাকা থেকে ৭টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। আগে সাদা ডিম ৬ টাকা থেকে সাড়ে ৬টাকা এবং লাল ডিম ৭ টাকা থেকে সাড়ে ৭টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্ত ৪টাকা থেকে সাড়ে ৪টাকা এবং লাল ডিম ৫ টাকা থেকে সাড়ে ৫টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লোকসান আর লোকসান। খাবার হোটেল-রোস্তোরাঁ বন্ধ ও ঘর থেকে বাজারে মানুষের আনাগোনা কমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

রাজশাহী নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার খামারি জাহিদ হাসান এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন,‘ আমার খামারে ১২০০ পোল্ট্রি মুরগি ছিল। করোনার কারনে সাড়ে ৪’শ মুরগি ১৯ হাজার টাকা লোকসান দিয়ে বিক্রি করেছি। আরোও ১৮০০ সোনালি মুরগি খামাওে আছে। বিক্রি করতে না পারায় ব্রয়লারের ওজন প্রায় ২ কেজির কাছাকাছি হয়ে যাচ্ছে। বড় মুরগির চাহিদা কম। চিন্তায় ঘুম আসে না। এই দূর্যোগ মুহূতে আমাদের দিকে ন্ াদেখলে পথে বসতে হবে।’

আরোও পড়ুন: পোলট্রি-ডেইরি খাতও পাবে প্রণোদনা

রাজশাহী দামকুড়া থানার হরিপুর এলাকার পোল্টি খামারি ও ডিলার সাকিব হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, করোনার কারণে প্রতিটি খামারির ৩০ শতাংশ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। ব্রয়লার, সোনালি, লেয়ার সবগুলোর একই অবস্থা। প্রতিকেজি মুরগির উৎপাদনে খামারিদের গড়ে খরচ হয় ১০০ টাকা। কিন্তু তাদের পাইকারি বিক্রি করতে হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। এতে কেজিপ্রতি প্রায় ২০ থেকে ২৫ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। তাছাড়া কয়েকদিনে তার ৮ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে বলেও জানান তিনি।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সচিব গোলাম জাকির হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ‘আমাদের এখানে পোল্ট্রি খুব খারাপ অবস্থাতে আছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে থেকেই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছেন। প্রায় ৭২ কোটি ৭৫০ লাখ টাকার প্রণোদনা দিয়েছেন। যেটা সকল ব্যবসায়ীদের জন্যে। এখন পর্যন্ত শুধু পোল্ট্রি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। আর পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরাও এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট সুযোগ সুবিধার বিষয়ে কোনো আবেদন করেনি। আমরা চেষ্টা করছি ব্যবসায়ীরা যেন এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারে। তবে এটাতো শুধু দেশেরই নয়- এটি আন্তর্জাতিক সমস্যাও। এটি সমাধানে সময় লাগবে।’

এদিকে মুরগির বাচ্চার দাম কম হলেও কিনতে আগ্রহ হারিয়েছেন খামারিরা। এ ব্যাপারে কাশিয়াডঙ্গা এলাকার আরেক খামারি সাগর হোসেন জানান, কয়েকদিন আগে খামারের প্রায় ৮০০ মুরগি বিক্রি করে দিয়েছি। খামারে আর মুরগি তুলিনি। মুরগি না তুললে কিছুটা লসতো হবে। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে মুরগি তুলছি না। আমাদের ক্ষুদ্র ব্যবসা। একবার বড় ধরনের লস হলে উঠে দাঁড়ানো প্রায় অসম্ভব হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অন্তিম কুমার সরকার এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, করোনা পরিস্থিতিতে পোল্ট্রি সেক্টও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লকডাউনের কারণে ডিম, মুরগির বাচ্চা সবকিছুরই দাম কমেছে। তবে বাচ্চা বিক্রির জন্যে অথবা কেউ ঢাকায় নিয়ে যেতে চাইলে তাদের জন্যে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।আমরা মন্ত্রণালয়ে আমাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরছি। খামারিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তবে এখনো পোল্ট্রি শিল্প নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। আর পরিবহন নিয়ে কোনো সমস্যা নাই। খাদ্যসহ জরুরি পরিবহন চলতে পারবে।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক জানান, এই মুহূর্তে মাঠে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া আছে। লকডাউনে জরুরি সেবাসহ কিছু বিষয় আওতামুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পোল্ট্রির খাবার পরিবহনও আছে। তাই আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে যথাযথভাবে কাগজসহ প্রমাণাদি দেখালে কোনো সমস্যা হবে না। আর পোল্ট্রি খাতের ক্ষতিগ্রস্ত বিষয়টি প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মাধ্যমে দেখা হবে। যাতে করে এই খাতটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।