নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: প্রান্তিক ডেইরি খামারি ও উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ দীর্ঘদিন কাজ করছে রাজশাহীর সওদাগর এগ্রো। বর্তমানে গরুর দুধের দাম অত্যন্ত কমে যাওয়ায় খামারিদের রক্ষায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যেখানে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন খামারিরা সেখানে রাজশাহী অঞ্চলে ৬০ টাকা কেজি দুধ কিনবে বলে ঘোষণা দিয়েছে সওদাগর এগ্রো।

আজ সোমবার ৯ মে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মো: ইয়াসির আরাফাত (রুবেল) এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে রাজশাহীর ৯ টি উপজেলা ছাড়াই শুধুমাত্র মেট্রো এলাকার আড়াই’শ ডেইরি খামারির ক্ষতি হয়েছে ১২ কোটি টাকার বেশি। মহামারির শুরু থেকেই এসব খামারে উৎপাদিত প্রায় ৩০ হাজার লিটার দুধের বেশিরভাগই স্বল্পমূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। প্রতি লিটার দুধ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তুলতে হিমসিম খেয়েছেন এখানকার খামারিরা। বর্তমানে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ তাড়াশ বাজারে প্রতি কেজি দুধ ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবুও দুধ কেনার মানুষ নাই। খামারিরা দুধের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। আমি নিজেও একজন ডেইরি খামারি তাই জানি- এ দামে দুধ বিক্রি করলে খামারিদের লোকসান হবে। তাই আমাদের এই উদ্যোগ নেওয়া।

পড়তে পারেন: বিপাকে খামারিরা, দুধের দাম বাড়ানোর সুপারিশ

সওদাগর এগ্রোর ফেসবুক পেজে তিনি লিখেন, “আপনারা হতাশ হবেন না! দুধের বিকল্প বাই প্রোডাক্ট তৈরী করে বিক্রি করুন। আর রাজশাহী শহর অথবা এর পার্শ্ববর্তী এলাকার কেউ যদি দুধ নিয়ে ঠেকে যান, বিক্রি করতে না পারেন তবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আমরা আপনার খামারের দুধ সর্বোচ্চ বাজারদাম ৬০ টাকা কেজি দরে কিনতে রাজি আছি। প্রান্তিক খামারিদের পাশে আছি সবসময়।”
কোন বিশেষ সুবিধা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নারী উদ্যোক্তা বা নারী ডেইরি খামারি রয়েছেন তারা যেহেতু বেশি পরিশ্রম করেন তাই তাদের সম্মান দেখানো হবে। ৬০ টাকা কিছু বেশি দামেই কিনব আমরা। রাজশাহী অঞ্চলের যেসব খামারি আছেন তারা যদি দুধ আমাদের কাছে দিতে চান তাহলে আমাদের ফোন করে (আরাফাত রুবেল-০১৭১১-১০৪২৯০) যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া আমাদের রাজশাহী মহানগরীর ভদরা ও উপশহর নিউমার্কেটে রসগোল্লা মিষ্টি পয়েন্টে যোগাযোগ করতে পারেন।
জেলা প্রাণিসম্পদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জেলার ৯টি উপজেলা ও একটি মেট্রো অঞ্চল মিলিয়ে দেশী ও সংকর জাতের গাভী থেকে দুধ উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার ২৭ মেট্রিক টন। সদ্য বিদায়ী বছর ২০২০ সালে দুধ উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার ২৬ মেট্রিক টন। ২০১৬ সালের তুলনায় জেলায় ৪ বছরে দুধ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন। পরের বছরগুলোতে পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকে দুধের উৎপাদন। করোনাকালে এ বিপুল পরিমাণ দুধ বিক্রির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভ্রাম্যমাণ দুধ বিক্রির ব্যবস্থা করলেও তা তেমন কার্যকর হয়নি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের এপ্রিলে দেওয়া লকডাউনে প্রতিদিন ১২০ লাখ থেকে ১৫০ লাখ লিটার দুধ অবিক্রীত থাকে ফলে প্রায় ৫৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয় প্রতিদিন।
এগ্রিকেয়ার/এমএইচ