জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: গ্রীন হাউজের মাধ্যমে থাই পাঙ্গাসের আগাম ব্রুড তৈরী এবং কৃত্রিম প্রজননে রেণু উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, প্লাবনভূমি উপকেন্দ্র, সান্তাহার, বগুড়ার বিজ্ঞানীরা। প্লাবনভূমি উপকেন্দ্র, সান্তাহার, বগুড়ার বিজ্ঞানীরা বিগত চার বছর যাবত গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালনা করে আসছেন।

বাংলাদেশে থাই পাঙ্গাস একটি জনপ্রিয় ও ব্যাপকভাবে চাষকৃত মাছের প্রজাতি। চাষের জন্য বিদেশ থেকে আনার পর বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক ১৯৯০ সালে সর্বপ্রথম এই মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন করা হয়।

বাণিজ্যিকভাবে অধিক উৎপাদনশীল এ মাছের জাতটি দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহজ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপকভাবে চাষ করা হচ্ছে। থাই পাঙ্গাস মেকং নদীর ক্যাটফিস গোত্রভুক্ত একটি মাছ। নব্বই এর দশকে থাইল্যান্ড থেকে আনা  পাঙ্গাসিয়াস সূচির (Pangasiussutchi) কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ব্যাপক পোনা উৎপাদন করে পুকুরে চাষ করা হয়।

বর্তমানে দেশব্যাপী প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জলাশয়ে একক প্রজাতি হিসেবে পাঙ্গাসের মোট উৎপাদন ৩.১৭ লক্ষ মেঃ টন, যেটি অভ্যন্তরীন মৎস্য উৎপাদনের ১২.৫৭% (মৎস্য অধিদফতর, ২০১৫)।

সান্তাহারস্থ প্লাবন ভূমি উপকেন্দ্রের প্রধান এবং উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ডেভিড রিন্টু দাস এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন,  পাঙ্গাসের প্রজনন কাল সাধারনত মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত। কিন্তু মৎস্য চাষী ও খামারীরা পুকুরে মজুদের জন্য মে মাসের শেষের দিকে এই মাছের পোনা হ্যাচারী মালিকের কাছ থেকে পেয়ে থাকে।

ফলশ্রুতিতে, দেরিতে পোনা পাওয়ার জন্য এবং চাষের জন্য বেশি সময় না পাওয়ায় চাষীরা লাভবান হতে পারছে না। যদি শীতের সময় (জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারি) পরিপক্ক ও ডিমওয়ালা পাঙ্গাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা যায় তাহলে মার্চ মাসে পোনা উৎপাদন সম্ভব হবে।

এতে বিক্রয় উপযোগী মাছ তৈরী করার জন্য পাঙ্গাস চাষের জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে। পাশাপাশি একই বছরে একাধিক বার পাঙ্গাস চাষ করে চাষীরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।

গবেষক দলের প্রধান ড. ডেভিড রিন্টু দাস জানান, আধিক উৎপাদন ও মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, প্লাবনভূমি উপকেন্দ্র, সান্তাহারে গবেষণা পরিচালনা করে গ্রীন হাউজ পদ্ধতিতে পানির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে ফেব্রুয়ারী মাসেই থাই পাঙ্গাসের আগাম ব্রুড তৈরী , রেণু এবং মার্চ মাসেই পোনা উৎপাদন সম্ভব।

গত তিন বছরে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহে রেণু উৎপাদন সম্ভব হলেও এবারই  প্রথম মিড ফেব্রুয়ারিতে রেণু উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরো জানান, সান্তাহার, আদমদীঘির মাটি ও পানি থাই পাঙ্গাসের রেণু এবং পোনা উৎপানের জন্য উপযুক্ত এবং এখান থেকেই এই পোনা সারাদেশে সরবরাহ হয়। পার্শ্ববতীর দেশ ভারতেও এর একটি বিরাট বাজার রয়েছে।

বাংলাদেশে থাই পাঙ্গাস অতি জনপ্রিয় ও ব্যাপকভাবে চাষকৃত মাছের মধ্যে অন্যতম একটি প্রজাতি। এই অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চাষকৃত মাছের প্রজাতির মধ্যে থাই পাঙ্গাস প্রধান । এজন্যই এই গবেষণা কার্যক্রমটি এই উপকেন্দ্র থেকে পরিচালনা করা হয়েছে।

সম্প্রতি এ প্রযুক্তিটি দেখতে যান স্বাদুপানির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: শাহা আলী এবং সদর দপ্তরের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: শহীদুল ইসলাম।

আরও পড়ুন: সঠিক পদ্ধতিতে পুকুর প্রস্তুতি, রোগবালাই প্রতিরোধের কৌশলসমূহ

ড. শাহা আলী জানান, থাই পাঙ্গাসের ৫% হারে দৈনিক গড় ওজন বৃদ্ধি পায়। আগাম রেণু উৎপাদনের জন্য চাষের চাষের সময় বাড়তি ২ মাস পাওয়া যাবে। এ প্রযুক্তিটি মাঠে সম্পধসারিত হলে আরো ১.৫ লক্ষ মেঃ টন বাড়তি উৎপাদন করা সম্ভব হবে। ফলে অভ্যন্তরীন মৎস্য উৎপাদনের পরিমান বেড়ে যাবে।

থাই পাঙ্গাসের আগাম ব্রুড তৈরী, কৃত্রিম প্রজননে রেণু উৎপাদনে সফলতা সম্পর্কে মো: শহীদুল ইসলাম জানান, প্রযুক্তিটি খুবই যুগোপযোগী। খুবই ভালো সম্ভাবনা রয়েছে মাঠে সম্প্রসারিত হওয়ার।