পুকুর নির্বাচন:
১.এ মাছ চাষের জন্য ৭-৮ মাস পানি থাকে এ রকম ১৫-২০ শতাংশের পুকুর/জলাশয় নির্বাচন করা যায়।
২. পুকুরটি বন্যামুক্ত এবং পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
পুকুর প্রস্তুতি:-
১.পুকুরের পাড় মেরামত করতে হবে।
২. প্রথমে পুকুরকে সেচের মাধ্যমে শুকিয়ে ফেলা প্রয়োজন।
৩.পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে প্রতি শতাংশে প্রতি ফুট গভীরতার জন্য ১৮-২৫ গ্রাম রোটেনন পাউডার দিয়ে সব ধরনের মাছ অপসারণ করা যায়।
৪. পুকুরের তলায় কাদা হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকলে হালকা করে কিছু বালি (দালান-কোঠা নির্মাণের জন্য যে বালু ব্যবহৃত হয়) ছিটিয়ে দেয়া যেতে পারে। এর ফলে পুকুরের তলায় গ্যাস হবে না, পানি পরিষ্কার এবং পরিবেশ ভাল থাকবে।
৫. রোটেনন প্রয়োগের ২-৩ দিন পর শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে পাথুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে। তবে চুন ছাড়াও জিওলাইট (প্রতি শতকে ১ কেজি) পুকুর প্রস্তুতির সময় প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৬. উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি তথা প্রাকৃতিক খাদ্যে বৃদ্ধির জন্য সার প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। পুকুর প্রস্তুতির শেষ ধাপে সার প্রয়োগ করা হয়। চুন প্রয়োগের ৪-৫ দিন পর শতকে ৮০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৪০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করা হয়।
৭. পুকুরে কোনো প্রকার জৈব সার দেওয়া যাবে না।
আরও পড়ুন: পাবদা মাছের পেট ফোলা রোগের চিকিৎসা
পোনা মজুদ:-
১. পুকুরে পোনা ছাড়ার পূর্বে পরিবহনকৃত পোনা পুকুরের পানির তাপমাত্রার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। এর জন্য ১০ লিটার পানি ও ১ চামচ পটাসিয়াম পারম্যাংগানেট অথবা ১০০ গ্রাম লবণ মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করতে হবে। এরপর তাতে ১-২ মিনিট গোসল করিয়ে পোনা জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
২. সার প্রয়োগের ৪ দিন পর পানির রং সবুজ বা বাদামি হলেই পুকুরে পোনা মজুদ করতে হবে।
৩. যদি সম্ভব হয় পোনা ছাড়ার সময় থেকে ৫-৬ ঘন্টা পুকুরে হালকা পানির প্রবাহ রাখতে হবে।
৪. একক চাষের ক্ষেত্রে শতাংশ প্রতি ৩-৪ গ্রাম ওজনের সুস্থ্য-সবল ২০০-২৫০টি পোনা মজুদ করা যেতে পারে।
৫. মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে প্রতি শতাংশে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি সাইজের ৫০টি পাবদা, ১০০টি শিং এবং ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি সাইজের ৫টি কাতলা , ১০টি রুই , ১০টি মৃগেল, ২টি সিলবার কার্প ও ২টি গ্রাস কার্পের সুস্থ পোনা মজুদ করতে হবে।
৬.তেলাপিয়ার সাথে পাবদা মাছ ভাল হয়ে থাকে এ কারণেই যে তেলাপিয়ার অবাঞ্চিত বাচ্চা পাবদা মাছ খেয়ে তাড়াতাড়ি বড় হয়।
আরও পড়ুন: পাবদা মাছের প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষ ব্যবস্থাপনা-পর্ব ১
খাদ্য ব্যবস্থাপনা:-
১.৩০% ফিস মিল, ৩০% সরিষার খৈল, ৩০% অটোকুড়া, ১০% ভূষি ও ভিটামিন প্রিমিক্স সহকারে সম্পূরক খাবার তৈরি করা যায় অথবা বাজারের কৈ মাছের ফিড খাওয়ালেও চলবে।
২. এরা সাধারণত রাতে খেতে পছন্দ করে। তাই উপরোল্লিখিত খাবারটি রাতে ২ বার প্রয়োগ করা যেতে পারে। মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে অন্যান্য মাছের জন্য স্বাভাবিক নিয়মে খাবার দিতে হবে।
৩. পোনা মজুদের পরের দিন থেকে মাছকে তার দেহ ওজনের ১২ ভাগ থেকে আরম্ভ করে দৈনিক খাবার দিয়ে যেতে হবে।
৪. প্রতি ১৫ দিন অন্তর খাদ্য প্রয়োগের হার ১% করে কমাতে হবে।
৫.পাবদা মাছের ওজন ৩০ গ্রামের উর্ধ্বে উঠলে খাদ্য প্রয়োগের পরিমাণ হবে তার দেহ ওজনের শতকরা ৫ ভাগ।
মাছ আহরণ ও উৎপাদন:
১. ৭-৮ মাসের মধ্যে ৩০-৩৫ গ্রাম ওজনের হলে মাছ আহরণ করা যাবে।
২. আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে একক চাষের মতাংশে ১৪-১৫ কেজি মাছ উৎপাদন করা যেতে পারে।
আধুনিক পদ্ধতিতে পাবদা মাছের চাষ শিরোনামে লেখাটির তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
এগ্রিকেয়ার / এমবি
