আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম

আন্তর্জাতিক ‍কৃষি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বাড়তির দিকে যাচ্ছে। খরা ও নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্য পণ্যটির দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শীর্ষ দুই রফতানিকারক দেশ থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে পণ্যটির রফতানি মূল্য অনেকটাই বেড়ে গেছে। খরায় উৎপাদন শঙ্কার কারণে দ্বিতীয় শীর্ষ রফতানিকারক দেশ থাইল্যান্ডে চালের রফতানি মূল্য এখন সাড়ে ছয় বছরে সর্বোচ্চে ঠেকেছে।

আর তৃতীয় শীর্ষ রফতানিকারক দেশ ভিয়েতনামে পরেছে কভিড-১৯-এর প্রভাব। এ কারণে দেশটিতে স্থানীয় পর্যায়ে পণ্যটির চাহিদা বাড়ছে। এতে দেশটিতে এক বছরে রফতানি মূল্য সর্বোচ্চে ঠেকেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে গত সপ্তাহে থাইল্যান্ডের বেঞ্চমার্ক ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চাল রফতানি করা হয়েছে প্রতি টন ৪৭০ থেকে ৪৯৫ ডলার মূল্যে, যা ২০১৩ সালের আগস্টের পর সর্বোচ্চ। এর আগের সপ্তাহেও এ রফতানি মূল্য ছিল টনপ্রতি ৪৬০ থেকে ৪৬৭ ডলার।

এ বিষয়ে ব্যাংককভিত্তিক চাল ব্যবসায়ীদের মত হলো, স্থানীয় চালকলগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই এখন আর পণ্যটি বিক্রি করতে চাইছে না। কারণ চলতি শুষ্ক মৌসুমে পণ্যটির সরবরাহ নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

থাইল্যান্ডের চাল উৎপাদনকারী এলাকাগুলোর মধ্যে বড় একটি অংশ এখন খরায় বিপর্যস্ত। উপরন্তু পণ্যটির রফতানি মূল্য বাড়তির দিকে থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে থাই চালের চাহিদা পড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করছেন স্থানীয় খাতসংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে থাই সরকার জানিয়েছে, দেশটিতে চলতি বছর শুষ্ক মৌসুম বেশ দীর্ঘায়িত হতে পারে। দেশটিতে শুষ্ক মৌসুমের মেয়াদ সাধারণত এপ্রিল পর্যন্ত থাকলেও চলতি বছর তা জুন পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

অন্যদিকে ভিয়েতনাম থেকে চালের রফতানি মূল্যও এখন বেশ বাড়তির দিকে। ৫ শতাংশ খুদযুক্ত বেঞ্চমার্কে ভিয়েতনাম থেকে পণ্যটির রফতানি মূল্য বৃহস্পতিবার ছিল প্রতি টন ৪০০ থেকে ৪০৫ ডলার, যা ২০১৮ সালের নভেম্বরের পর সর্বোচ্চ। আগের সপ্তাহেও এ বাজার আদর্শে পণ্যটির বিক্রয়মূল্য ছিল টনপ্রতি ৩৯০ থেকে ৪০০ ডলারে।

এ বিষয়ে হো চি মিন সিটিভিত্তিক এক ব্যবসায়ী বলেন, গত এক সপ্তাহে ভিয়েতনামে চালের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেশ শক্তিশালী ছিল। নভেল করোনাভাইরাস আতঙ্কে এখানকার পরিবারগুলোর মধ্যে চালের মজুদ বাড়ানোর প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এ কারণে সরবরাহ ও মজুদ সংকট দেখা দেয়ায় রফতানিকারকরা বাধ্য হয়েই পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) ভিয়েতনাম থেকে চালের রফতানি বেড়েছে। দেশটির কাস্টমস পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ সময় দেশটি থেকে পণ্যটির মোট রফতানি হয়েছে ৯ লাখ ২৮ হাজার ৭৯৮ টন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৭ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে শীর্ষ রফতানিকারক দেশ ভারত থেকে চালের রফতানি মূল্য এখন কমতির দিকে রয়েছে। মূলত রুপির ক্রমাগত অবমূল্যায়নের কারণে পণ্যটি আমদানিতে মূল্য সুবিধা পাচ্ছে আমদানিকারক দেশগুলো। যদিও আফ্রিকার দেশগুলোয় ভারত থেকে পণ্যটির আমদানি চাহিদা এখন কিছুটা বাড়তির দিকে।

ভারত গত সপ্তাহে ৫ শতাংশ খুদযুক্ত বেঞ্চমার্কে চাল রফতানি করছে প্রতি টন ৩৬৩ থেকে ৩৬৭ ডলারে। আগের সপ্তাহেও এ রফতানি মূল্য ছিল প্রতি টন ৩৬৭ থেকে ৩৭১ ডলার।

মুদ্রাবাজারে ভারতীয় রুপির বিনিময় হার বর্তমানে রেকর্ড সর্বনিম্নের কাছাকাছি পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পণ্যটি আমদানিতে মূল্য সুবিধা পাচ্ছেন আমদানিকারকরা।

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স বাংলাদেশের চলতি বোরো মৌসুমে ২ কোটি টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নাও হতে পারে বলে উল্লেখ করেছে। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার ক্ষোভ থেকে চাষীরা অন্যান্য কৃষিপণ্য উৎপাদনে ঝুঁকে পড়ার কারণে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আরও পড়ুন: তরমুজ চাষে ব্যস্ত সাবেক বনদস্যু কিবরিয়া, আউয়াল

আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বাড়তির দিকে শিরোনামে সংবাদটির তথ্য বণিকবার্তা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।