মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামের প্রভাব এখন দৃশ্যমান। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে হটাৎ আগুন লাগে সব ধরনের পণ্যে। থেমে থাকে পোল্ট্রি পণ্য উৎপাদনকারী কাঁচামালের দাম। বেড়েছে ভুট্টা, সয়াবিন মিল, রাইস পলিশের দাম। ফলে উৎপাদন খরচ বাড়ায় ডিম মুরগির দাম বেড়ে যায়। বর্তমানে খামারিরা যে দামে ডিম মুরগি বিক্রি করছেন তা শীঘ্রই কমার সম্ভাবনা নাই। উপরন্ত খাদ্যের দাম কমতে পারে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশের পোল্ট্রি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সংগঠন ও ডিম উৎপাদনকারী প্রান্তিক খামারিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে- গত ২ বছরের ব্যবধানে দফায় দফায় পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বৃদ্ধি খামারিদের নাজেহাল করে তুলেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৬ বারের মতো বেড়েছে পোল্ট্রি খাদ্যের দাম। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশের নিবন্ধিত ২৭০টি ফিড মিল তাদের উৎপাদিত খাদ্যের দাম বাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ৫০ কেজির বস্তা ১০০ থেকে ১২০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে খামারিদের।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

ডিম মুরগির দাম বাড়ার আসল কারণ!

মুরগির একটি ডিমের দাম ৬০ হাজার!

সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পোল্ট্রি শিল্প

খামারিরা বলছেন, করোনাকালের শুরু থেকে প্রতিবস্তা পোল্ট্রি খাদ্যে ১২০০ থেকে ১৫৫০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা শুরুর দিকে ১৮’শ টাকার খাদ্যের বস্তা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩৪’শ ৫০ টাকায়।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মোহসীন আলীর এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, খামারিরা করোনাকাল থেকেই লোকসান দিয়ে আসছে। এরমধ্যে কিছু সময় সামান্য দাম বাড়লেও তা দিয়ে খামার টেকানো সম্ভব হয়নি। ফলে ৫০ শতাংশের বেশি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। বিদেশ থেকে পোল্ট্রি ফিড তৈরির উপাদান যেমন সয়াবিন মিল, ভুট্টা, প্রোটিন আমদানি করতে হয়। এসব পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। কিন্তু ডিম-মুরগির দাম সেভাবে বাড়েনি। ডিম মুরগির দাম কমার সম্ভাবনা নাই।

পোল্ট্রি খাতের ভবিষৎ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে কর্পোরেট কোম্পানিগুলো তাদের নিজেদের উৎপাদিত খাবার দিয়ে পোল্ট্রি পণ্য ডিম-মুরগি উৎপাদন করছে। তারা খাদ্য উৎপাদন করে খরচ পড়ে ৪৫ টাকা কেজি কিন্তু সেই একই খাদ্য প্রান্তিক খামরিদের কিনতে হয় ৫৮ থেকে ৬২ টাকা কেজি দরে।

আমরা কথা বলেছি ফিড মিল ইন্ড্রাস্ট্রিজের সাথে। খাদ্যের দাম কমার আশ^াস দিয়েছেন তারা। এখন খামারিরা তাদের শেড ভেঙে বিক্রি করে দিচ্ছে। ব্যাংক থেকে লোন পাচ্ছেন না। ফলে ভবিষৎ কর্পোরেটদের হাতে হলে যাবে। তারা এখন যে ২৩ থেকে ২৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে সেটা পরবর্তীতে পুরোটাই করবে। এ কঠিন সময়ে সরকারের উচিৎ হবে এই খাতকে রক্ষার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

ডিমের দামে হতাশ খামারিরা, উঠছেনা উৎপাদন খরচ

ডিমের হালি ৬৬ টাকা, ব্রয়লার ১৭০ টাকা

সোনালি মুরগির ডিম উৎপাদন বৃদ্ধির কৌশল

রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো: এনামুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বর্তমানে পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে রাজশাহীর ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ ডিম পাড়া লেয়ার মুরগির খামার বন্ধ হয়ে গেছে। ব্রয়লারের ৮০ শতাংশ খামার বন্ধ। তারা উৎপাদনে ফিরতে পারেন নি। ফলে বাজারে মুরগির টান পড়েছে।

তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে লেয়ার খামারিরা এখন একদিন বয়সের বাচ্চা তুলতে শুরু করেছেন। যা উৎপাদনে আসতে সময় লাগবে ১৫০ দিন। এছাড়া খামারিরা যেভাবে লোকসানে ছিলেন নতুন দামে ডিম-মুরগি বিক্রি করে তা পুষিয়ে নিতে পারবেন। এ পরিস্থিতিতে ডিম-মুরগির যে দাম রয়েছে তা কমার সম্ভাবনা নাই। খামারিদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে তাই তারা কম দামে পণ্য বিক্রি করবে না।

রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা এলাকার পোল্ট্রি খামারি সোহেল রানা এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, এখন একই ডিম উৎপাদনে খরচ পড়ছে সাড়ে ৮ টাকার উপরে। প্রিিন্তক খামারিদের ৯ টাকা। আর বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। ১ হাজার মুরগি খাবার খেলে ১০০০ ডিম পাওয়া যায় না। ৯০ শতাংশ ডিম পেলে ১ টাকা করে লাভ হয়। শুধু খাবার খাইয়েই মুরগি পালন সম্ভব? নাকি শ্রমিক, ঔষুধ, ভ্যাকসিন, পরিবহন আছে? সরকার যদি এই খাতকে টিকিয়ে রাখতে চায় তাহলে খাদ্যের দাম কমিয়ে খামারিদের সুবিধা দিতে হবে। তাছাড়া বড় বড় কোম্পানির হাতে এই খাত চলে গেছে ২০ টাকা প্রতিপিস ডিম খেতে হবে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

সোনালী মুরগির নামে আমরা কি খাচ্ছি!

ব্রয়লারে ১০ সোনালী মুরগির কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা

লেয়ারে ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগে হতাশ প্রবাস ফেরত মালেক

আরেক খামারি সাজিদ হোসেন বলেন, ডিম দেওয়া ১ হাজার লেয়ার পালন করতে বা খামার করতে ৮ লাখ টাকা খরচ করতে হয়। এখন আমরা দিনে ১ হাজার টাকা লাভ করছি দাম বাড়ার পরে। এতগুলো টাকা ইনভেস্ট করে যদি এ সামান্য লাভ না আসে তাহলে আমাদের সংসার চলবে কিভাবে? সবকিছুর দাম বাড়তি কিন্তু কিছুদিন আগেও আমরা সাড়ে ৭ টাকা দামে ডিম বিক্রি করেছি। মহাজনের কাছে ৮ লাখ ১০ লাখ টাকা বাঁকি!

দেশের বৃহৎ পোল্ট্রি ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কাজী ফিডের বিপনন বিভাগের প্রধান সালাউদ্দিন হাওলাদারের সাথে। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, বৈশি^কভাবে পোল্ট্রি খাদ্য উৎপাদনের কাঁচামাল ভুট্টা, সয়াবিন মিল, রাইস পলিশ অন্যান্য উপাদানের দাম বাড়ার কারণে দাম বেড়েছে। যদি এই উপাদানগুলো দাম কমে তাহলে খাদ্যের দাম কমবে। বাজারে অন্যান্য কোম্পানি যদি দাম কমিয়ে দেয় তাহলে আমাদেরও দাম কমাতে হবে।

ডিম-মুরগির দাম বাড়ায় ব্যবসায় লাভ বেড়েছে পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের। রাজশাহীর সাহেববাজারের ব্যবসায়ী শামীম হোসেন বলেন, ডিম-মুরগির দাম বাড়লে ব্যবসা ভালোই হয়। আমরা ছোট ব্যবসায়ীরা মাল স্টক করে রাখার সুযোগ নেই। মোসলেমের মোড়ে ১০ লাখের বেশি ডিম জড়ো হয়। একদিন পর যদি তারা গাড়ি পাঠায় তাহলে তাদের লাভ হবে। কিন্তু আমাদের তা সুযোগ নাই।

রাজশাহীর বাজারে বর্তমানে লাল ডিমের হালি ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা। আর সাদা ডিম ৪২ থেকে ৪৫ টাকা। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকায়। সোনালি ২৯০ টাকা, কক মুরগি ৩০০ টাকা, হাঁস ৪৫০ টাকা, রাজহাঁস ৪৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দাম আরো বাড়বে এটা নিশ্চিত এমটাই জানান ব্যবসায়ী রাকিবুল ইসলাম।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ