মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে ক্রেতার নাগালের বাইরে। পাগলা ঘোড়া ছুটেছে মাছের বাজার। ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে মাছের দাম! বাজারে পুঁটি মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১২০-১৪০ টাকায়।

তবে মৎস্য চাষিরা বলছেন, মাছের উৎপাদন খরচ, পরিবহন ও শ্রমিকের মজুরি বাড়ার কারণে বেড়েছে দাম। অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতকালে মাছের আমদানি কিছুটা কমে ফলে দাম বেড়ে যায়। শীতকালে খাল-বিলের পানি শুকিয়ে শেষ মাছ ধরে জেলেরা। বিলের মাছের আধিক্য ও চাহিদা বাড়ে এসময়।

আজ বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর ২০২২) রাজশাহীর সাহেববাজার মাছের আড়ত, উপশহর নিউমার্কেট, লক্ষীপুর মাছের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে কার্পজাতীয় মাছ। বাজারে চাহিদার তুঙ্গে রয়েছে ছোট মাছ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে মাছের চাহিদা থাকলেও চাষের মাছের আমদানি কম থাকায় এক দফা দাম বেড়েছে। এখন সবকিছুর দাম বেড়েছে ফলে মাছের দাম বাড়ানো যৌক্তিক। গত এক মাসের মধ্যে মাছের দাম উঠানামা করেছে ৪ বার। এরমধ্যে মাত্র কমেছে একবার! বিলের মাছের মধ্যে পুঁটি, শোল, টাকি, শিং, বোয়াল মাছের দেখা মিলছে বেশি।

মাছের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তারা বলছেন, রাজশাহীর চাষ হওয়া বড় বড় মাছ স্থানীয় বাজারে কেনার লোক নেই। এখানকার মাছ যায় দেশের বিভিন্ন জায়গায়। বাজারে সামান্য টান পড়লে মাছের দাম দু-দশ টাকা উঠানামা করে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

৪টি মাছের দাম ১৮ লাখ টাকা!

ইলিশে ৩০০ টাকা, বেড়েছে ডিম-মাছের দাম

একযুগে দেশীয় মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৪ গুণ

তেলের প্রভাব মাছের বাজারে, কেজিতে বাড়লো ৫০ টাকা

সাহেববাজারের মাছ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, মাছের দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল মাছের আমদানি ভালো হয়েছিল তাই দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা কম দামে বিক্রি করেছি। এখন আমরা মাছ কিনতে বেশি দামে কিনছি, বেশি দামে বিক্রি করছি। সবকিছুর দাম বাড়ার কারণে মাছের পরিবহন খরচ বেড়েছে। যারা মাছ ধরার জেলের মজুরি বেড়েছে। সবমিলিয়ে চাষিরা, জেলেরা দাম বেশি নিচ্ছে তাই বাধ্য হয়ে আমাদের কিনতে হচ্ছে।

রাজশাহীর বিভিন্ন কাঁচা বাজারের মৎস্য আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজারে ছোট এক থেকে দেড় কেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা কেজি দরে যা আগে ১৯০-২০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এই দাম থেকে ২০ টাকা কম দামে গত দুদিন বিক্রি হলেও আজ ২৭০ টাকা দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ৫ কেজির রুই বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকা কেজি দরে যা আগে বিক্রি হয়েছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায়।

এছাড়া, সিলভার কার্প মাছ প্রতিকেজি ১৯০ থেকে ২২০, ছোট আকারের কাতল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা; ৫ কেজির কাতল ৩৪০ থেকে ৪০০ টাকা , দুই কেজি ওজনের মৃগেল চাষি পর্যায়ে ২২০ টাকা এবং বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়। এছাড়া তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, বোয়াল ১০০০ থেকে বেড়ে ১১০০ টাকা। অন্যদিকে চিংড়ির কেজিতে ৫০০ টাকা বেড়ে বাগদা চিংড়ি ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

শীতে মাছের রোগ প্রতিরোধে ১৮ করণীয়

শীতকালে মাছের ক্ষত, লেজ ও পাখনা পচা রোগ প্রতিরোধে করণীয় (ভিডিও)

শীতে ফসল, প্রাণী ও মাছের যত্নে যেগুলো জরুরি

শীতকালে পুকুরের মাছ ও পানির ১০ সমস্যার সমাধান জানুন

রাজশাহী জেলা মৎস্য সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলায় মৎস্য উৎপাদন ও বিপণন-বিক্রির সঙ্গে জড়িত জেলার প্রায় সাড়ে ৯ লাখ মানুষ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮০ হাজার ১৪১ মেট্রিকটন মাছ উৎপাদন হয়। বর্তমানে মাছ উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৮৩ হাজার ৪৯২ মেট্রিন টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে জেলায় মাছ উদ্বৃত্ত ৩১ হাজার ৪২৯ মেট্রিক টন। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২২ সালে মাছের উদ্বৃত্ত প্রায় তিন গুণ। সেইসাথে মোট জলাশয়ের সংখ্যা বেড়েছে। তিন ৪৮ হাজার ৪২৭টি থেকে বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৭২০ টিতে।

জেলার পবা উপজেলার পারিলা গ্রামের বাসিন্দা সোহরাব হোসেন বলেন, ২০১৯-২০ সালের দিকে নারিশ মাছের ফিড কিনেছি ৯০০ টাকা সেই বস্তা এখন ১৪০০ টাকা। তবে উৎপাদন খরচ বাড়ার সাথে সাথে মাছের দাম বেড়েছে। কিছুদিন ধরে যে দাম তাতে কিছুটা লাভ করা সম্ভব। এখন পাইকারিতে ৩-৪ কেজি ওজনের রুই বিক্রি করেছি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা পর্যন্ত। পাইকারিতে আমরা ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেশি পাচ্ছি। আগে ৫ কেজির রুই ৪০০ টাকা বিক্রি করেছি দাম বাড়ার পর ৫’শ টাকা কাছাকাছি বিক্রি হচ্ছে।

বেশ কয়েকজন চাষির সাথে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় উৎপাদিত রুই, কাতলা, ম্রিগেল, গ্রাসকার্প, ব্লাডকার্প, সিলভারসহ বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছ ঢাকার বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানেও ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে তাজা মাছ।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ