সুমনা আক্তার ইভা, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: টি কফপাতা, পটিয়াপুরী নামেও পরিচিত। পাথরকুচির পাতাকে বৈজ্ঞানিক জগতে ” ব্রায়োফাইল” নামে ডাকা হয়। পাথরকুচির পাতা এতোটাই ঔষধি গুণ সম্পন্ন হওয়ায় একে “মিরাকল লিফ” ও বলা হয়।

স্থানীয় নাম : পাথরকুচি।
বৈজ্ঞানিক নাম:Bryophyllum pinnatum
Classification :
জগৎ : Plantae
বর্গ : Saxifragales
পরিবার : Crassulaceae
গণ : Bryophyllum
প্রজাতি : Bryophyllum pinnatum

ঔষধি গুণ :
পাথরকুচির পাতায় প্রচুর পরিমানে ওষধি গুনাগুন রয়েছে। যা ব্যাধি নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন করে।

উপকারিতা :
১. কিডনির পাথর অপসারণ
পাথরকুচি পাতা কিডনি এবং গলগণ্ডের পাথর অপসারণ করতে সাহায্য করে। দিনে দুবার ২ থেকে ৩টি পাতা চিবিয়ে অথবা রস করে খান।

২. পেট ফাঁপা
অনেক সময় দেখা যায় পেটটা ফুলে গেছে, প্রসাব আটকে আছে, আধোবায়ু, সরছে না, সেই ক্ষেত্রে একটু চিনির সাথে এক বা দুই চা-চামচ পাথর কুচির পাতার রস গরম করে সিকি কাপ পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। এর দ্বারা মূত্র তরল হবে, আধো বায়ুরও নিঃসরণ হবে, ফাঁপাটাও কমে যাবে।

৩. মেহ
সর্দিজনিত কারণে শরীরের নানান স্থানে ফোঁড়া দেখা দেয়। যাকে মেহ বলা হয়। এ ক্ষেত্রে পাথরকুচির পাতার রস এক চামুচ করে সকাল-বিকাল একসপ্তাহ খেলে উপকার পাওয়া যায়।

৪. রক্তপিত্ত
পিত্তজনিত ব্যথায় রক্তক্ষরণ হলে দু’বেলা এক চা-চামচ পাথর কুচির পাতার রস দুদিন খাওয়ালে সেরে যাবে।

৫. মৃগী
মৃগী রোগাক্রান্ত সময়ে পাথর কুচির পাতার রস ২-১০ ফোঁটা করে মুখে দিতে হবে। একটু পেটে গেলেই রোগের উপশম হবে।

৬. সর্দি
সর্দি পুরান হয়ে গেছে, সেই ক্ষেত্রে এটি বিশেষ উপকারী। পাথরকুচি পাতা রস করে সেটাকে একটু গরম করতে হবে এবং গরম অবস্থায় তার সাথে একটু সোহাগার খৈ মেশাতে হবে। তিন চা-চামচের সাথে ২৫০ মিলিগ্রাম যেন হয়। তা থেকে দুই চা চামচ নিয়ে সকালে ও বিকালে দুবার খেলে পুরান সর্দি সেরে যাবে এবং সর্বদা কাশি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

৭. শিশুদের পেট ব্যথায়
শিশুর পেটব্যথা হলে, ৩০-৬০ ফোঁটা পাথর কুচির পাতার রস পেটে মালিশ করলে ব্যথার উপশম হয়। তবে পেট ব্যথা নিশ্চিত হতে হবে।

৮. ত্বকের যত্ন
পাথরকুচি পাতায় প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। সাথে সাথেই এর মধ্যে জ্বালাপোড়া কমানোর ক্ষমতা থাকে। যারা ত্বক সম্বন্ধে সচেতন, তারা পাথরকুচি পাতা বেটে ত্বকে লাগাতে পারেন। ব্রণ ও ফুস্কুড়ি জাতীয় সমস্যাও দূর হয়ে যাবে।

৯. কাটাছেঁড়ায়
টাটকা পাতা পরিমাণ মত হালকা তাপে গরম করে কাটা বা থেতলে যাওয়া স্থানে সেক দিলে আরাম পাওয়া যায়।

১০. পাইলস
পাথরকুচি পাতার রসের সাথে গোল মরিচ মিশিয়ে পান করলে পাইলস্ ও অর্শ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

১১. জন্ডিস নিরাময়ে
লিভারের যেকোনো সমস্যা থেকে রক্ষা করতে তাজা পাথরকুচি পাতা ও এর জুস অনেক উপকারী।

১২. কলেরা, ডাইরিয়া বা রক্ত আমাশয়
তিন মিলিলিটার পাথরকুচি পাতার জুসের সাথে ৩ গ্রাম জিরা এবং ৬ গ্রাম ঘি মিশিয়ে কয়েক দিন খেলে এসব রোগ থেকে উপকার পাওয়া যায়।

১৩. শরীর জ্বালাপোড়া
দু-চামচ পাথর কুচি পাতার রস, আধা কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে দুবেলা খেলে উপশম হয়।

১৪. পোকা কামড়
বিষাক্ত পোকায় কামড়ালে এই পাতার রস আগুনে সেঁকে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।

১৫. উচ্চ রক্তচাপ
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং মুত্রথলির সমস্যা থেকে পাথরকুচি পাতা মুক্তি দেয়।

এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড.মো.কামরুল আলম খান ২০০৮ সালে পাথরকুচির পাতা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সফল হন। পাথরকুচির পাতার রসে রয়েছে এসিডিক হাইড্রোজেন আয়ন। যা দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। পাতার রস হতে ১২ ভোল্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ল্যাম্প জ্বালাতে সফল হয়। এই উদ্ভাবন নিবন্ধিত হওয়ার পর বড় আকারে গবেষণা করা হচ্ছে, যাতে অধিকপরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়।

আরোও পড়ুন: নয়নতারার নানান ঔষধি গুণ

মিরাকল লিফ পাথরকুচি পাতার অবিশ্বাস্য ঔষধি গুণ শিরোনামে সংবাদের লেখাটি লিখেছেন রাজশাহী কলেজ উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুমনা আক্তার ইভা 

উল্লেখ্য, রাজশাহী কলেজে শুরু হয়েছে ‘প্লান্ট ফটোগ্রাফি ২০২০’ প্রতিযোগিতা। কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের রাজশাহী কলেজ ন্যাচার কনজারভেশন ক্লাবের (আরসিএনসিসি) উদ্যোগে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীর নামসহ লেখা পত্রিকায় প্রকাশ করা হবে।

বিস্তারিত: রাজশাহী কলেজে ‘প্লান্ট ফটোগ্রাফি’ প্রতিযোগিতা শুরু