নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে অনার্স-মাস্টার্স করেছেন শিহাব। বেকার হয়ে বসে না থেকে নিজ উদ্যোগ বায়োফ্লকে চাষ করেছেন মাছ। তাঁর বাড়ির আঙ্গিনায় ৭৫ হাজার লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন দুটি ট্যাংকে চাষ করেছেন ৫০ হাজার তেলাপিয়া। শুরুতেই সফল হয়েছেন তরুণ এই উদ্যোক্তা!

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ইউনিয়নের পূর্ব ফিলিপনগর গ্রামের গোলাবাড়িয়া পাড়ার মৃত মো. হাফিজুর রহমানের ছেলে শিহাব উদ্দিন। স্বল্প জায়গায় অধিক লাভবান পেশা হিসেবে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের কথা ভাবেন। ইউটিউবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ পদ্ধতি দেখতে থাকেন।

কথা হয় শিহাব উদ্দিনের সাথে। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, পড়াশোনা করে চাকরির পেছনে না ছুটে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছি।২০১৯ সাল থেকে শুরু করে এখন পযর্ন্ত বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছি। এটা অনেকে কঠিন মনে করে আসলে সহজ এবং লাভজনক। প্রথমে সবার মতো আমারও সমস্যা হয়েছিল। পোনা কিনতে ভুল হয়েছিল, তাই লোকসান খেয়েছিলাম তখন। তারপর থেকে সফলতার সাথে মাছ চাষ করছি। শিং, কই, মাগুর ও পাবদাসহ লাভজনক কয়েক ধরণের মাছ চাষ করেছি।

আরোও পড়ুন: ১০ হাজার লিটার বায়োফ্লকে মাছ চাষে আয়-ব্যয়ের হিসাব

বায়োফ্লক তৈরিতে মাছ চাষে খরচ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে অবকাঠামো ও সেড নির্মাণ করতে। এরপর জেনারেটর, অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য এয়ার মেশিন, প্যারামিটারসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কিনতে হয়েছে। এজন্য প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। পোনা কিনেছিলাম দেড় টাকা পিস। পোনা বাবদ মোট খরচ হয়েছিল ৯০ হাজার। মাছের খাবার বাবদ ৩০ হাজার টাকা। তারপরও খরচ বাদ দিয়ে লাখ টাকার ওপরে লাভ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। প্রথম অবস্থায় শুরু করতে বিনিয়োগের পরিমাণ বেশি তাই একটু সমস্যা হয়।

মাছ কতদিনে বিক্রির উপযোগী হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাছ বিক্রির উপযোগী হতে চার-পাঁচ মাস সময় লাগে। ঠিকমতো পোনা নির্বাচন করতে না পারলে খরচ বেশি পড়ে যায় এবং মাছ বড় হয় কম।

বায়োফ্লকে মাছ চাষের ঝুঁকি ও সমস্যা তুলে ধরেন এই উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বায়োফ্লকে মাছ চাষের সববেচে বড় বাধা পোনা নির্বাচন। কাঙ্খিত ভালো মানের পোনা না পাওয়ার কারণে চাষিরা মার খাচ্ছেন। সরকারি পর্যায়ে এ নিয়ে তেমন কোন পদক্ষেপ বা নতুনদের সরকারিভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নাই। বেসরকারিভাবে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে অনেকেই ধোকার মুখে পড়েছেন। বায়োফ্লক তৈরির যন্ত্রপাতি কয়েকগুণ বেশি দাম ধরা হয়, এটিও একটি বড় সমস্যা।

আরোও পড়ুন: মাছের দামে দিশেহারা মাছচাষিরা

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দৌলতপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা খোন্দকার শহিদুর রহমান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে আমার এলকায় অনেকেই স্ববলম্বী হয়েছেন। কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় তরুণরা বেশি ঝুঁকছে। দৌলতপুরে প্রায় ১০-১২টি বায়োফ্লক মাছের খামার গড়ে উঠেছে। মৎস্য অফিসের পরামর্শ নিয়ে তারা খামার করছেন। এলাকায় সর্বপ্রথম বায়োফ্লকে মাছ চাষ শুরু করেছিলেন শিহাব উদ্দিন। তিনি এখন অনেককে পরামর্শ দেন। নিজেও সফল হয়েছেন অন্যকে এগিয়ে নিচ্ছেন।

বায়োফ্লকে মাছ চাষে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি বিষয়ে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, মাছের জাত নির্বাচন করা এবং পানির গুণাগুণ অক্ষত রাখা বায়োফ্লকে মাছ চাষে লক্ষণীয় বিষয়। অক্সিজেন মাত্রা কমে গেছে মাছ মারা গিয়ে লোকসান হয়। এজন্য বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে হাতে কলমে শিক্ষার মাধ্যমে বায়োফ্লকে মাছ চাষ করা শুরু করাই উত্তম। তবে, আমার এলাকায় লোকসান হয়েছে এমন খবর শুনিনি।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ